শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা এখনো উচ্চ ঝুঁকিতে দেশ

ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা এখনো উচ্চ ঝুঁকিতে দেশ

ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছি আমরা। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার আন্তর্জাতিক সূচকে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, তবুও আমাদের দেশের অবস্থান এখনো খুবই হতাশাজনক। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের ২০২০ সালের চিত্র নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং কানাডা থেকে নিবন্ধিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী ব্যবসায়িক সংগঠন ট্রেস এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে থাকে। ট্রেসের এ স্কোর কোনো দেশে ব্যবসা করতে হলে ঘুষ দেয়ার প্রয়োজন কতটুকু সে সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়। ২০১৪ সাল থেকে এ তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনের শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ‘ট্রেস ব্রাইবারি রিস্ক মেট্রিক্স’। প্রতিবেদনের সূচক অনুসারে, যে দেশের পয়েন্ট যত বেশি, সে দেশের ঝুঁকি তত বেশি। এতে ৬৬ পয়েন্ট পেয়ে ১৬৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের প্রতিবেদনে ঘুষের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের সূচক ছিল ৭২ এবং বিশ্বের মধ্যে অবস্থান ছিল ১৭৮তম। এ বছর সূচক কমেছে এবং অবস্থানের ১২ ধাপ উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের ঝুঁকির সূচক ১০০-এর মধ্যে ৬৬, যেখানে সবচেয়ে কম ঝুঁকির দেশ ডেনমার্কের সূচক মাত্র ১। সবচেয়ে বেশি ৯৮ স্কোর রয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত দেশ উত্তর কোরিয়ার। উচ্চ ঝুঁকির দিক থেকে উত্তর কোরিয়ার পরে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ সুদান, ভেনিজুয়েলা, ইরিত্রিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া প্রভৃতি দেশ। তালিকা অনুযায়ী, এবার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এ তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থান ভুটানেরÑ ৪৮তম।
মোটাদাগে চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ঘুষের ঝুঁকি-সংক্রান্ত স্কোর নির্ণয় করা হয়। এগুলো হলোÑ সরকারের সাথে ব্যবসায়িক আলোচনা, ঘুষবিরোধী পদক্ষেপ এবং এর কার্যকারিতা, সরকার ও সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং সুশীল সমাজের তদারকি ক্ষমতা। নিয়ম-কানুনের বাধা, সমাজে ঘুষবিরোধী অবস্থান, ঘুষের প্রত্যাশা, সরকারি বাজেটের স্বচ্ছতা, নিয়ম-কানুনের সাথে সরকারি কর্মকর্তাদের স্বার্থ, গণমাধ্যমের গুণগত মান ও স্বাধীনতাসহ বেশ কিছু বিষয় এসব মানদণ্ড পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে কাজ পেতে ব্যবসায়ীদের নানা ক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হয়। কিছু নিয়ম-কানুন এত জটিল যে, ফাঁকফোকর বের করে ব্যবসায়ীদের ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়। ভূমি নিবন্ধন, গাড়ি নিবন্ধনের মতো কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে সরকারি ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা রীতিমতো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ভুল থাকে না, সেখানে একটু কম ঘুষ নেয়া হয়। আর অনিয়ম থাকলে বড় অঙ্কের ঘুষের মাধ্যমে রফা হয়ে থাকে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, অনেক দিন ধরেই দেশে প্রায় সব ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেনের প্রবণতা সাধারণের মধ্যে স্বাভাবিক একটি বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে সব ক্ষেত্রেই ঘুষ লেনদেন বহু গুণে বেড়ে গেছে। লক্ষণীয় বিষয়Ñ সামাজিকভাবে আগে যেখানে একজন ঘুষখোরকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো, সেভাবে এখন আর দেখা হয় না। অর্থাৎ অবৈধ উপায়ে উপার্জন আর নিন্দনীয় নয়। মোটাদাগে বলা চলে, এটি আমাদের নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের লক্ষণ চিহ্নিত করে। মূলত, ভোগবাদী জীবন-দর্শনের প্রতি মানুষের ঝোঁক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধে শৈথিল্য যেনতেনভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য দায়ী। তবে এটাও সত্য, ঘুষের সর্বগ্রাসী এই প্রবণতা রাতারাতি বন্ধ করা কঠিন। সামনের দিনগুলোতে এর মাত্রা কমিয়ে আনতে পারাই হবে আমাদের জন্য বড় সাফল্য। এ জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ অর্থলিপ্সার লাগাম টেনে ধরতে হবে। এর জন্য সরকারের দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিমুক্তভাবে ভূমিকা পালন করতে দিতে হবে। একই সাথে সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার ফি গ্রহণ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনতে হবে। এতে আশা করা যায়, ঘুষ লেনদেনের প্রবণতা কমে আসবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877