বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন

আপনার স্বল্পভাষী অটিস্টিক শিশুরও মাতৃভাষার অধিকার রক্ষা করুণ

আপনার স্বল্পভাষী অটিস্টিক শিশুরও মাতৃভাষার অধিকার রক্ষা করুণ

আদান ইসলাম ‍॥
আমেরিকায় এসে যখন আমার ছোট ছেলেটিকে স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করার জন্য অ্যাপ্লাই করলাম তখন বোর্ড অব্ এডুকেশন থেকে একটি মিটিং এ আমাকে ডেকে পাঠালো!আমি গিয়ে দেখলাম কি উচ্চতর এদের স্পেশাল এডুকেশন সিস্টেম, মিটিং এ সাইকোলজিস্ট, থেরাপিস্ট ,সোশ্যাল ওয়ার্কার থেকে শুরু করে একজন অটিস্টিক বাচ্চার জন্য যতগুলো স্পেশালিস্ট প্রয়োজন সব ধরনের লোকজন বসে আছে।আমাকে প্রশ্ন করলো “আমাদের কাছে তুমি কি প্রত্যাশা করো?” আমার মতো শক্ত মনের মানুষের সেদিন কি হয়েছিলো জানিনা,উত্তর দিতে গিয়ে ওদের সবার মুখের দিকে তাকিয়েই আমি কেঁদে ফেললাম!কাঁদতে কাঁদতেই বললাম “দেখো আমার এ বাচ্চার জন্য আমি আমার দেশ ছেড়ে চলে এসেছি…এ কষ্ট তোমরা বুঝবে কি না জানিনা..আমি চাই ও এদেশের বেস্ট স্কুলে পড়বে আর তিনটি জিনিস শিখবে,এক-নিজে নিজে খেতে পারবে, দুই-নিজে টয়লেট করতে পারবে, তিন-নিজের কাপড়টা নিজে পরতে পারবে”! ওরা কথা রাখলো, নিউইয়র্কের সবচেয়ে ভালো স্কুলটিতে ও ভর্তি হলো। এবার আশাভঙ্গের পালা, প্রথম দিনই ক্লাস টিচার বললো “বাড়ীতে ইংরেজীতে কথা বলো কারণ আমরা ওকে কথা বলা শেখাচ্ছি ইংরেজীতে”। আমি বললাম “তোমরা তোমাদের কাজ করে যাও- আমাকে এ ব্যাপারে আর দ্বিতীয়বার অনুরোধ করোনা। কারণ, এটা আমি শুনবোনা! ও অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, তারপর জিজ্ঞেস করলো ‘কেন শুনবেনা আমি কি জানতে পারি?’ আমি বড়াই করে বললাম “অবশ্যই কিšুÍ তার আগে তোমাকে আমার ব্যকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতে হবে, আমি চাইল্ড ডেভেলপমেন্টে গ্র্যাজুয়েশন করা ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া ছাত্রী…আমি জানি মাতৃভাষা কখনো কেড়ে নিতে নেই…যে নিজের ভাষা জানবে তার জন্য অন্যের ভাষা শেখাটা কোন বড় ব্যাপার নয় ? আর দুটি ভাষা শিখলে ব্রেইন ডেভেলপমেন্টও ভালো হয়। কারণ একটা থেকে আরেকটা সুইচ করতে পারাও এক বিশাল স্কিল! ‘সে বললো “এটাতো অন্যান্য সাধারণ বাচ্চাদের জন্য কিন্তু এ তো স্পেশাল কিড”-আমি বললাম “তাহলে তোমরাও এদেরকে ভিন্নভাবে দেখো?”.. সে চুপ করে গেলো..মুখটা একটু শুকিয়ে গেলো একজন ভিন্ন চামড়ার(কালার্ড) মানুষের কাছ থেকে এহেন উত্তর হজম করতে সময় লাগলো!
যাই হোক আমি বুঝলাম শুধু স্কুল দিয়ে হবেনা..বাসে এবং ট্রেনে করে দু’ঘন্টা জার্নি করে ছেলেকে নিয়ে গেলাম ব্রুকলিনের শেষ মাথায় স্পীচ থেরাপি করাতে..সেখানে একজন ইয়াং পোলিশ তরুণী থেরাপিস্ট বললো “খবরদার বাড়ীতে ইংরেজী বলবে না-ওর মাতৃভাষা যেনো হারিয়ে না যায়। আমার খুব দ্:ুখ জানো! আমার বাব- মা খেয়াল করেনি, আমি আমার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি!” আমি বললাম “আমি জানি এবং মানি…আমার ছেলে যদি কোনদিন কথা বলে-তবে অবশ্যই আমার ভাষাতেই কথা বলতে শিখবে..আর তুমি হয়তো জানোনা, আমাদের বাংলা ভাষাটা যেমন স্ট্রং-তেমনি আমাদের ভাষা রক্ষার ইতিহাসটাও…“যাই হোক এ বছর একুশে হয়তো হলো না- তবে নিশ্চয়ই হবে। অন্যকোন একুশে…ভাষা দিবসে আমার অঙ্গীকার “আমার ছেলে যদি কোনদিন কথা বলতে শেখে তবে যেন প্রথমে বাংলায় কথা বলে-তারপর অন্যকোন ভাষায়….এটাই যেন হয়……..!”

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877