শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

কাশ্মীর সংকটের নেপথ্যে

কাশ্মীর সংকটের নেপথ্যে

স্বদেশ ডেস্ক:

স্বাধীনতার পর ভারত ও পাকিস্তান তিনবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেÑ এর মধ্যে দু’বারই কাশ্মীর নিয়ে। এ ছাড়া দেশ দুটির মধ্যে বহুবার কাশ্মীর নিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তেমন কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। কিন্তু একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায় এ দীর্ঘদিনেও কেন কাশ্মীর নিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না? অথবা এ সংকটের কারণই বা কী?

মূলত কাশ্মীর সংকটের বীজ বহু পুরনো। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তানের স্বাধীনতার লগ্ন থেকেই এ বীজ লুক্কায়িত।

‘ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স এ্যাক্ট’ নামে ব্রিটিশ ভারত বিভক্তির যে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, কাশ্মীর তার ইচ্ছে অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তান যে কোনো রাষ্ট্রেই যোগ দিতে পারবে। কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং চাইছিলেন স্বাধীন থাকতে অথবা ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে। অন্যদিকে পশ্চিম জম্মু এবং গিলগিট-বালতিস্তানের মুসলিমরা চেয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে হরি সিং ভারতে যোগ দেবার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধÑ যা চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৯৪৮ সালে ভারত কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। জাতিসংঘের ৪৭ নম্বর প্রস্তাবে কাশ্মীরে গণভোট, পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার এবং ভারতের সামরিক উপস্থিতি ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনতে আহ্বান জানানো হয়। কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি বলবৎ হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

অন্যদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চীন কাশ্মীরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে, আর তার পরের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীনÑ এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয় ১৯৬৫ সালে, এর পর আরেকটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৭২-এর সিমলা চুক্তির মধ্য দিয়ে বর্তমানের ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ বা নিয়ন্ত্রণ রেখা চূড়ান্ত রূপ পায়।

গোটা কাশ্মীর তিন দেশ শাসন করলেও ভারত শাসিত কাশ্মীরে সংঘাতের পরিস্থিতি বিরাজ করে থাকে।

এর কারণ হলো দিন যত গেছে কাশ্মীরের প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আরও কঠোর হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যাধিক্য, স্থানীয়দের ওপর নির্যাতনের অভিযোগসহ কাশ্মীরিদের স্বায়ত্তশাসন বারবার খর্ব হয়েছে। এতে সেখানে জঙ্গি সংগঠনগুলো বেড়ে ওঠার পরিবেশ পেয়েছে। আর এ সুযোগ নিয়েছে পাকিস্তান। যদিও পাকিস্তান তা মুখে অস্বীকার করে থাকে কিন্তু জঙ্গি নেতাদের ‘যতœ’ বন্ধে তাদের তেমন ভূমিকা দেখা যায় না। এসব কারণে কিছু দিন পরপর জঙ্গি হামলা হয় আর এর দায় পড়ে পাকিস্তানের ওপর। পাকিস্তান মুখে আলোচনার কথা বললে ভারত বলে আগে জঙ্গি দমন কর। এভাবে বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে কিন্তু কাশ্মীরে শান্তির নিশানা দেখা যাচ্ছে না। বিবিসি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877