স্বদেশ ডেস্ক: ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেন অনেকেই। কেন করেন? কী সুবিধা তা বলেছেন কয়েকজন ব্যবহারকারী।
মহাখালীতে ট্রাভেল এক্সপার্টস নামের একটি ভ্রমণ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকেরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসেন দেশে-বিদেশে ভ্রমণের টিকিট কাটার জন্য। তাঁদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে আমরা ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিই। এখানে বসেই সারা বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইনের টিকিট কেটে দিতে পারি। তা ছাড়া এসব কার্ডে টিকিট কাটলে একটা ছাড় পাওয়া যায়। যার একটি অংশ গ্রাহককে দিই।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী তরিকুর রহমান দুই প্রতিষ্ঠানের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দুটিই ব্যবহার করেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, নগদ টাকা বহন করতে হয় না, মূলত এ জন্য তিনি কার্ড ব্যবহার করেন। এ ছাড়া কেনাকাটায় ছাড় পাওয়ার জন্যও তিনি এই কার্ড ব্যবহার করেন।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন একবার বেতনের টাকা তুলে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় রাস্তায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। সেই থেকে পকেটে আর বেশি টাকা রাখেন না। জানালেন, বেশি টাকা থাকা মানে আলাদা একটা দুশ্চিন্তা। তাই এ থেকে রেহাই পেতে কার্ড ব্যবহার করেন।
পূজার সময় পুরো পরিবারের কেনাকাটার দায়িত্ব নেন লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা পূজা রায়। তিনি বলছিলেন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধার কথা—‘এখন ভালো ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে কার্ডে বিশেষ বিশেষ ছাড় দেয়। এ ছাড়া অনেক খরচের টাকা একসঙ্গে বহন করা মানে আলাদাভাবে সতর্ক থাকতে হয়। এসব ঝুটঝামেলা থেকে রেহাই দেয় ব্যাংকের কার্ড। মূলত এসব কারণেই তিনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন।
গুলশানের বাসিন্দা আসিফ শাহরিয়ার আমদানি–রপ্তানির ব্যবসা করেন। ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে যেতে হয় তাঁকে। এ ছাড়া বিদেশি ক্লায়েন্টের পাওনাও পরিশোধ করতে হয়। এসব কাজে তিনি সহায়তা পান ক্রেডিট কার্ডের। তিনি জানালেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করায় ঝামেলা কমে গেছে। পাওনাদারের টাকা পরিশোধের জন্য আর কারও দিকে চেয়ে থাকতে হয় না। এসব সুবিধাই তিনি ক্রেডিট কার্ডে পেয়ে থাকেন।
গভীর রাতে হঠাৎ করে মাজেদুল হকের পরিবারের এক সদস্য অসুস্থ হন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করতে বলেন। একসঙ্গে এত টাকা তাঁর ছিল না। পরে এক বন্ধুর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর থেকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তিনি। মাজেদুল হক বলেন, নিয়মিত টাকা পরিশোধ করলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা অনেক উপকারী। তাৎক্ষণিক ব্যাংকে গিয়ে টাকা তোলার ঝামেলা নেই। যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় টাকা তোলার এই সুবিধার কারণে তিনি নিয়মিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন।
বিদেশে পড়াশোনার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে পান্থপথের স্টাডি হেল্প সেন্টার। প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘অনেকে বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। তাঁদের টাকা পরিশোধে সহায়তা করি আমরা। এখান থেকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে চীনসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তির খরচ, টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ পরিশোধ করি। এসব কাজে ক্রেডিট কার্ড অনেক সহায়ক।’
চট্টগ্রামের বাসিন্দা আফসানা হক বললেন, ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড এখন জীবনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। তিনি বেতনের টাকা পান ডেবিট কার্ডে। সেই কার্ড দিয়ে সুপারশপে খরচ করলে বিশেষ ছাড় পান। একটু বেশি খরচ করলে বেশ ভালো সাশ্রয় হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বড় বড় শপিং মলে এখন ক্রেডিট কার্ডে মূল্যছাড়ের সুবিধা আছে। এ জন্য তিনি দুই ধরনের কার্ড ব্যবহার করেন। তা ছাড়া প্রায়ই দেশের বাইরে বেড়াতে যান। বিমানের টিকিট কাটার সময় মোটা অঙ্কের টাকা ছাড় পান। এসব কারণে তিনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন।
দেশে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করেন ফ্রিল্যান্সাররা। তাঁদের টাকা আসে বিদেশ থেকে। সে জন্য তাঁরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। এমনই একজন হলেন মোহাম্মদপুরের সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে বসেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত কাজের সমাধান করেন। এ জন্য যে টাকা পান, তা ক্রেডিট কার্ডে এসে জমা হয়। খুব সহজেই দেশে বসে তিনি এই টাকা তুলে খরচ করতে পারেন।
দেশের বাইরে পড়াশোনা করেন মিরপুরের সীমা রায়। তিনি বললেন, স্কলারশিপের টাকা প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডে এসে জমা হয়। আবার সেই টাকা থেকে খরচ করতে তাঁকে বেগ পোহাতে হয় না। বিদেশে কেনাকাটা করেন তিনি এই কার্ড দিয়ে। আবার দেশে এসেও একই কার্ড ব্যবহার করেন। এভাবে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ক্যাশ ব্যাক পান তিনি। সব মিলেয়ে এই কার্ডের সুবিধায় তিনি মুগ্ধ।