রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

৭০০ রোহিঙ্গাকে ফেরাতে হঠাৎ প্রস্তাব মিয়ানমারের

৭০০ রোহিঙ্গাকে ফেরাতে হঠাৎ প্রস্তাব মিয়ানমারের

স্বদেশ ডেস্ক

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলা চলমান থাকাবস্থায় হঠাৎ মাত্র ৭০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। তবে ঠিক কবে এই রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নিতে চায় সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি দেশটি। এতদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা টালবাহানায় সময় পার করলেও হঠাৎ কেন মিয়ানমার এই জনগোষ্ঠীর মাত্র ৭০০ জনকে ফেরাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সে বিষয় এখন পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করছে ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে। যদি সেটি সম্ভব হয় তা হলে পরিকল্পনার বিস্তারিত জানতে চাইবে ঢাকা।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মাত্র ৭০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে মিয়ানমার। প্রত্যাবাসন নিয়ে গত ক’মাসে সিরিজ বৈঠক হয়েছে দেশটির রাজধানী নেপিদো ও সিত্তুয়েতে। গত ৮ মার্চ রাখাইন রাজ্য পরিষদে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. থেট খাইং, রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. অং কিয়াও মিন এবং অন্য কর্মকর্তারা নেপিদোয় প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার খুঁটিনাটি নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন।

ধারণা করা হচ্ছে- আইসিজেতে মামলা বাতিলের আবেদন নাকচ হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের বর্তমান জান্তা সরকার মানবিক বলে ব্যাপক প্রচার চলছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এটি করা হচ্ছে। প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার বিষয়টি এমনই হতে পারে। কারণ এর আগেও চীনের মধ্যস্থতায় দুই দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিয়ানমারের নানা টালবাহানায় তা ভেস্তে যায়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের প্রত্যাশা- পর্যায়ক্রমে পরিচয় নিশ্চিত করে সব রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাবে। সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা এরই মধ্যে নেপিদোকে দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এক হাজার ১০০ রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে পরিবারভিত্তিক। দেশটি এদের মধ্যে ৭০০ জনকে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাব এখনো পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করা হয়নি। যতটুকু দেখা গেছে, তাদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে পরিবারের সদস্যরা আলাদা হয়ে যায়। আমরা পরিবার ভেঙে রোহিঙ্গাদের পাঠাতে চাই না। যদি পরিবার থেকে আলাদা করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হয়, তা হলে তারা মিয়ানমারে যেতে চাইবে না। আমরা কোনো নেতিবাচক কথা রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে শুনতে চাই না। আমরা মিয়ানমারকে জানিয়েছি, পুরো তালিকা একত্রে নিতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা এ জায়গায় আটকে রয়েছে। এই এক হাজার ১০০ জনকে মেনে নিলে তাদের পাঠিয়ে দিয়ে আবারও তালিকা পাঠাব মিয়ানমারের কাছে।

একই প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে গত বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মিয়ানমারের প্রস্তাবটি আমরা পর্যালোচনা করছি। এখনো কোনো কিছু ঠিক হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা- প্রত্যাবাসনের জন্য যাদের ঠিক করা হয়েছে, তারা যেতে চায় কিনা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, সংখ্যা বিষয় নয়, পরিবারভিত্তিক যে তালিকা আমরা দিয়েছি, তা ধরে যদি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত ১৩ মার্চ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। আমরা আশা করি, এ বছর বড় একটা কিছু হবে। সাংবাদিকরা ‘বড় কিছু’ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে দুবার প্রত্যাবাসনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ঠিক করেছি, দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ না হলে আমরা কোনো তথ্য প্রকাশ করব না। রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

মিয়ানমারে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর বহুদিন দেশটির সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

সম্প্রতি সেটি শুরু হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় পর মিয়ানমারের সঙ্গে প্রথম কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো পরিকল্পনা শেয়ার করেননি মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। ‘অ্যাডহক টাস্কফোর্স ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন’ শীর্ষক ওই বৈঠক হয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। এর আগে ২০২১ সালের শুরুতে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক হয়েছিল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877