স্বদেশ ডেস্ক:
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বিশ্বকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আনা একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। তবে চীন ও ভারত প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটদানে বিরত ছিল। অন্যদিকে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যসহ ২৫ দেশ। এবং যুক্তরাষ্ট্র ৬০ কোটি ডলারের অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার সকালে প্যারিসে শুরু হওয়া বার্ষিক কৃষি মেলা উদ্বোধন করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ম্যাক্রন বলেন, ইউরোপে যুদ্ধ ফিরে এসেছে। এই যুদ্ধ বেছে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং একটি দুঃখজনক মানবিক পরিস্থিতিতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘ইউক্রেনের জনগণ যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং ইউরোপ এই প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
ম্যাক্রন বলেন, ‘এখন আপনারা যদি এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করেন, সে ক্ষেত্রে আমি বলব- এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং বিশ্বে এই যুদ্ধের পরবর্তী ফলের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। তাই আমাদের উচিত হবে এখন থেকেই এই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা।’
দীর্ঘ দুই মাস ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে দেশটির পূর্বাঞ্চলে সেনা অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। তার ভাষণ সম্প্রচারের পর পরই রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় এবং তড়িৎগতিতে ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করেছেন রুশ সেনারা।
সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিরোধ যখন তুঙ্গে ছিল, সেই সময় কূটনৈতিকভাবে এই সংকট সমাধানের পথ বের করতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মস্কো গিয়েছিলেন ম্যাক্রন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে পুতিনকে রাজি করানো।
মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন তিনি; কিন্তু সেই বৈঠক যে তেমন সফল হয়নি তা তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন বৈঠকপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে।
মস্কোর সেই সংবাদ সম্মেলনে ম্যাক্রন বলেছিলেন, ‘সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে এখনো কোনো স্থির সিদ্ধান্ত হয়নি; তবে আমার মনে হচ্ছে- আমাদের সমানে কঠিন দিন অপেক্ষা করছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিয়েপ্পে বিবিসি রেডিও ফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী, রুশ আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সাধারণ জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে; কিন্তু নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে যে কোনো সময় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ শুরু করতে পারে রুশ বাহিনী। এ কারণে যুক্তরাজ্য ও তার মিত্র ২৪ দেশ মনে করছে, অবিলম্বে ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা পাঠানো উচিত।’
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ৬০ কোটি ডলার সহায়তা দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ বিষয়ক আইনি ধাপসমূহের দ্রুত সুরাহা করতে ব্লিনকেনকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি।