সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ত্বকের রোগ

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ত্বকের রোগ

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাসাহিত্যে বর্ষাকালের রূপ-সৌন্দর্যের বন্দনা থাকলেও বাস্তব অবস্থায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মানবদেহে প্রবল। ত্বকে নানা সমস্যার পাশাপাশি কিছু দীর্ঘমেয়াদি রোগের প্রকোপ এ সময়ে বেশি হয়ে থাকে। বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে ত্বকের বেশ বেগ পেতে হয়। এ সময় সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত ইনফেকশন। একে তো করোনাকাল, এর মধ্যে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় আমাদের শরীরে বাসকারী কিছু জীবাণু হঠাৎ বংশ বৃদ্ধি করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সৃষ্টি করে ত্বকের নানা ধরনের রোগ। মূলত শরীরের ভাঁজগুলোয় ছত্রাক জন্মায়। এর নাম ঞরহবধ ঈড়ৎঢ়ড়ৎরং বা দাদ। প্রচ- চুলকানির পাশাপাশি কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি করে। মূলত গলা, মুখ, কুচকি, মলদ্বার এবং বুক ও পিঠে এটি বেশি দেখা যায়। সাধারণত ছোট গোল ক্ষত থেকে বাড়তে বাড়তে এটি মানচিত্রের রূপ নেয়। অনেক সময় নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে এতে পুঁজ হতে পারে। ফাঙ্গাস শরীর ছাড়াও মুখে, ঠোঁটে এমনকি মাথার ত্বকেও হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। মাথায় হলে এর নাম ঞরহবধ ঈধঢ়রঃরং, কুচকিতে হলে ঞরহবধ ঈৎঁৎরং বা ঔড়শবং ওঃপয, হাত-পায়ে হলে ঞরহবধ গধহঁস ও ঞরহবধ চবফরং.

সেবোরিক ডারমাটাইটিস : বর্ষাকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। মাথার ত্বক, ভ্রু, মুখমন্ডল, নাকের দুপাশ, বুক ও পিঠের মাঝখানে ছোট ছোট দানার মতো দেখা দেয়, যা অনেকটাই তৈলাক্ত ও হলুদাভ। প্রচ- চুলকানির সঙ্গে মাথার চুল ধরে পড়া বেড়ে যাওয়া, ত্বকে জ্বলনি ও ফুস্কড়ি দেখা দেয়, যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। মূলত ণবধংঃ নামক এক ধরনের ছত্রাক দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে এবং বিরূপ আচরণ শুরু করে। ফল খুসকি, চুলকানি, জ্বলনি, লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কেড়ে নেয় শরীরের সব ধরনের স্বস্তি।

খোসপাঁচড়া : ঝধৎপড়ঢ়ঃরবং ঝপধনরব নামক এক ধরনের পরজীবী, যা দেখতে অনেকটা ক্ষুদ্র কচ্ছপের মতো শরীরের বিভিন্ন স্থানে দানা সৃষ্টি করে। চুলকানির তীব্রতা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। চুলকানির তীব্রতা সাধারণত রাতে মারাত্মক হয়। এটি এত বেশি ছোঁয়াচে যে, একজনের হলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা না করালে সহজেই কিডনি জটিলতা দেখা দেয়। পরিবারের সবাইকে (আক্রান্ত না হলেও) একই সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়।

ব্রণ : বয়ঃসন্ধিকালে এ সমস্যা হলেও বর্ষাকালে বয়স্কদের মধ্যেও দেখা দেয়। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, মুখম-ল নিয়মিত পরিষ্কার করেন না, দীর্ঘসময় ধরে প্রসাধনী ব্যবহার করেন বা চর্মরোগের ভুল ওষুধ খেয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি। মুখম-ল ছাড়াও এটি বুক ও পিঠের মাঝখানে, গলায়, দুই বাহুতে দেখা দেয়। ত্বকে নিয়মিত বাসকারী এক ধরনের জীবাণু চৎড়ঢ়রড়হড় নধপঃবৎরঁস অপহব অনুকূল পরিবেশ পেয়ে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে প্রদাহের সৃষ্টি করে, যা লোমকূপ আক্রান্ত করে দানা বা ক্ষত তৈরি করে।

খুশকি : প্রচলিত একটি ধারণা হলো- খুশকি শীতকালে হয়। আসলে এক ধরনের পরজীবী ছত্রাক (ণবধংঃ) বর্ষাকালেও কারো কারো মাথায় আক্রমণ করে, যা তীব্র চুলকানির পাশাপাশি কপালে, মুখে দাগ ও ক্ষতের সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে চুল পড়াও বাড়িয়ে দেয় অস্বাভাবিক হারে। বর্ষাষাকালে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চবৎংড়হধষ ঐুমবহব বা ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ সময় প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করা, মুখম-ল পরিষ্কার করা জরুরি। যেহেতু রোগগুলো ছোঁয়াচে, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র, যেমন- চিরুনি, টাওয়েল, সাবান, বিছানা-বালিশ অবশ্যই আলাদা আলাদাভাবে ব্যবহার করতে হবে। ছত্রাক বা ঋঁহমঁং, পাঁচড়া বা ঝপধনরবং, খুশকি, সেবোরিক ডারমাটাইটিস ইত্যাদি না কমে আরও বেড়ে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ত্বকের ধরন বুঝে শ্যাম্পু, সাবান ব্যবহার করা জরুরি। তৈলাক্ত ত্বকে ঙরষ ভৎবব এঊখ ঈখঊঅঘঝঊজ ব্যবহার করা, ঙরষ ভৎবব পষবধহংরহম ঞড়হবৎ ব্যবহার করা, মিশ্র ত্বকে সব ধরনের ঈষবধহংবৎ, ঞড়হবৎ ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও ত্বকের স্বাভাবিকতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে সিরামিড ও হাইয়ালুরনিক এসিডসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

লেখক : চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877