সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৪ অপরাহ্ন

যখন এনজিওগ্রাম ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে হবে

যখন এনজিওগ্রাম ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে হবে

স্বদেশ ডেস্ক:

স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর বেঁচে থাকার অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বন্ধ হয়। রক্ত সরবরাহ দুই থেকে পাঁচ মিনিটের বেশি বন্ধ থাকলে স্নায়ুকোষ স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়। স্ট্রোক যে কোনো সময় ঘটতে পারে। আর স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হয়। বিলম্বে চিকিৎসা নিলে জটিলতা বাড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রাণহানি ঘটে।

উপসর্গ : শরীরের কোনো একদিকে দুর্বল বোধ করা বা নাড়াতে না পারা। হাত-পা অবশ অবশ ভাব। মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া। প্রচণ্ড মাথাব্যথা। কথা অস্পষ্ট হওয়া। বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব। দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া। মুখের অসাড়তা, কথা জড়িয়ে যাওয়া। বেসামাল হাঁটাচলা। হঠাৎ খিঁচুনি বা ধপ করে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হওয়া ইত্যাদি এ রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়।

তাৎক্ষণিক করণীয় : উল্লিখিত উপসর্গগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে স্ট্রোক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমন হলে যা করতে হবে তা হলোÑ রোগীকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ মুখে দেওয়া যাবে না। কারণ এগুলো শ্বাসনালিতে ঢুকে আরও ক্ষতি করতে পারে। মুখে জমে থাকা লালা, বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে। গায়ে থাকা জামা-কাপড় ঢিলা করে দিতে হবে। রোগীকে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতাল বা চিকিৎসালয়ে নিতে হবে এবং হাসপাতালে যাওয়ার সময় খেয়াল করে রোগীর আগের চিকিৎসার ফাইলপত্র নিতে হবে।

পরীক্ষা : কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে জরুরি ভিত্তিতে ব্রেইনের রেডিওলজিক টেস্ট, সিটিস্ক্যান, এমআরআই করা উচিত। ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার, হার্টের সমস্যার জন্য ইকো পরীক্ষা করাতে হবে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাও করতে হবে।

চিকিৎসা : স্ট্রোক হলে যেহেতু মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং কম রক্তপ্রবাহ নিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারে না, তাই তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করতে হয়। ওষুধ প্রয়োগ করে রক্তের চাপ, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। রক্তের জমাট বাঁধা অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রাথমিক ধাপ কাটিয়ে ওঠার পর দীর্ঘদিন ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। তাই স্ট্রোক হয়েছে বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দেরি হলে জটিলতা ক্রমে বাড়তে থাকবে এবং তাতে রোগীর মৃত্যুশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।

স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় : নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। কেউ উচ্চ রক্তচাপের রোগী হলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খাবেন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মোটেই ওষুধ বন্ধ করবেন না। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে। নিয়ম করে হাঁটা ভালো। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ পরিহার করে চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মনে রাখতে হবে যে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

লেখক : অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877