স্বদেশ ডেস্ক:
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে পাওয়া হলুদ পদ্মের রহস্যের জট অবশেষে খুলেছে। গবেষকরা ওই হলুদ পদ্মের নাম দিয়েছেন ‘গোমতী’। গোমতী নদীর প্লাবনভূমিতে এটি জন্মানোর কারণে এই নাম দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ তো বটেই, এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের কোথাও হলুদ পদ্মের কোনো প্রজাতি নেই। প্রশান্ত মহাসাগরের এক পাশে দেখা যাওয়া সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মটিকে এশীয় পদ্ম বলা হয়। আর উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যাওয়া হলুদ রঙের পদ্মটিকে আমেরিকান পদ্ম নামে ডাকা হয়। তাই তো কুমিল্লায় বুড়িচংয়ে পাওয়া হলুদ পদ্ম নিয়ে দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তাহলে কি আমেরিকান পদ্ম কোনোভাবে বাংলাদেশে বংশবিস্তার করল?
গত সেপ্টেম্বরে ওই হলুদ পদ্ম নিয়ে বাসসসহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একদল শিক্ষক তাতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তারা কুমিল্লার গোমতী নদীতে জন্মানো ওই পদ্ম নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। এর নমুনা সংগ্রহ করে তা নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তারা নিশ্চিত হন, এটি আমেরিকান পদ্ম নয়।
বিজ্ঞানীদের দলটি বলছেন, এটি আসলে এশীয় পদ্মেরই একটি নতুন ধরণ, যা বাংলাদেশেই প্রথম দেখা গেল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল হাসানের নেতৃত্বে একই বিভাগের অধ্যাপক আল মুজাদ্দেদ আলফাসানী ও অধ্যাপক মোঃ জসিম উদ্দিন ওই পদ্ম চিহ্নিত করার গবেষণাটি করেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব প্ল্যান্ট টেক্সোনমির বিজ্ঞান সাময়িকী প্ল্যান্ট টেক্সন এর ডিসেম্বর ২০২০ সংখ্যায় এ ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক দলটি ওই হলুদ পদ্মের নাম দিয়েছেন ‘গোমতী’। গোমতী নদীর প্লাবনভূমিতে এটি জন্মানোর কারণে এই নাম। এশীয় পদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Nelumbo nucifera। এই হলুদ পদ্মের বৈজ্ঞানিক নামের সাথে gomoti, Bangladesh শব্দ দুটি যোগ হবে।
গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বাসসকে জানান, এটি এশীয় পদ্মের মতোই, তবে গঠনগত কিছু পার্থক্য আছে। তবে আমেরিকান হলুদ পদ্মের সাথে এর অমিল অনেক বেশি। ফলে এটি আমেরিকান হলুদ পদ্ম নয়, এটা তারা নিশ্চিত হয়েছেন। কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে এটিকে তারা এশীয় পদ্মের একটি প্রকরণ বলছেন।