স্বদেশ ডেস্ক:
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হওয়া ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ এবং এর ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রশিবির’কে অনৈতিকভাবে অর্থায়নের অভিযোগে দলটির নেতাদের নিয়ন্ত্রণাধীন দেশের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় সরকার। কারণ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে এসব প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করছিল।
পরবর্তী সময়ে চিহ্নিত এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় অবৈধ অর্থায়ন রোধে। এর পর পেরিয়ে গেছে ১১ বছর। কিন্তু এখনো পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের নেতা ও পৃষ্ঠপোষকদের নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মানারাত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়’।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের বা জামায়াতের যেসব নেতা বিভিন্ন সময় সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে অর্থায়ন ও সরাসরি নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন, তারা এখনো সেসব পদে রয়েছেন। পর্দার আড়াল থেকে জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার পাশাপাশি সরকারকে বিব্রত করতে নাশকতামূলক কর্মকা-ে অর্থায়ন করছেন তারা। তদুপরি প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রশিবিরের সাবেক
নেতাদের নিয়োগ প্রদানও থেমে নেই। এ ছাড়া করোনার এই ক্রান্তিকালে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের নামে তাদের মানসিকতা গড়ে তোলা হচ্ছে জামায়াতি-ধারায়।
জানা গেছে, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন, এমন দুএকজন কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটিতে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া এবং রাষ্ট্রবিরোধী নানা কর্মকা-ে উসকানি প্রদানের বিরোধিতা করায় তাদের চাকরি খোয়ানো ভয় দেখানো হয়। এ ছাড়া এসব কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও বরাবরই উপেক্ষিত। সুকৌশলে তাদের দূরে রাখা হয়। ফলে অদূর ভবিষ্যতে ফের নাশকতামূলক কর্মকা-ে অর্থায়নের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সূত্র জানায়, রাষ্ট্রবিরোধী নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পেয়ে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অনলাইন শিক্ষা কর্মসূচির আহ্বায়ক মোহাম্মদ উসমান জামান। তার নেতৃত্বে করোনা ভাইরাস মহামারীতেও অনলাইন কার্যক্রমে কৌশলে ইসলামি শিক্ষায় দীক্ষিত করার নামে জামায়াত-শিবিরের প্রচার চালানো হচ্ছে। একই সময়ে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াত নেতা ও মানারাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ইব্রাহিম ম-ল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. গোলাম সাকলায়েন বলেন, জামায়াতের হয়ে নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকার কারণে মোহাম্মদ উসমান জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
সূত্র জানায়, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে দলীয়করণ ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড বা পর্ষদ। এ ছাড়া কেনাকাটাসহ দুটি ভবন নির্মাণের শুরুতে স্থাপত্যবিদ নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ফার্নিচার কেনাকাটায় তৃতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ‘সোহাগ কোয়ালিটি ফার্নিচার’ নামক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়।
২০১৬ সালের ২১ জুলাই জেএমবির ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় আমির’ মাহমুদুল হাসানকে (২৭) টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী পরে আকলিমা রহমান, মৌ ও মেঘনা নামে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪। তৎকালে র্যাব ৪-এর অধিনায়ক লুৎফুল কবির সংবাদ সম্মেলনে জানান, আকলিমা রহমান জেএমবির তহবিল সংগ্রহ করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি আকলিমা ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলে বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করতেন। তার সঙ্গে অনেকেই সাক্ষাত করতেন। পুলিশ ও র্যাবের ভাষ্য, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেখানে জামায়াত-শিবিরের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। আর শিবিরের একটি অংশ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। মোহাম্মদ উসমান জামান, ইব্রাহিম মল্ডলসহ মানারাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসহ নানাভাবে আয়ের বড় একটি অংশ জামায়াত-শিবিরের ফান্ডে জমা করছেন।
তবে মানারাত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আবদুল হান্নান আমাদের সময়কে বলেন, সারাদেশে এমন লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে তারা (পুলিশ) নাশকতার মামলা দিয়েছে। এর মধ্যে কয়টা সত্য? বিষয়টি আদালত দেখবে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ জাহের। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম এলাকায় আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।