শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
করোনারোগী নিজেই দোকানে যাচ্ছেন খাবার সংগ্রহে

করোনারোগী নিজেই দোকানে যাচ্ছেন খাবার সংগ্রহে

স্বদেশ ডেস্খ:

রাজধানীর একটি হাসপাতালে সকালে পচা ডিম ও বাসি রুটি কলা এবং দুর্গন্ধযুক্ত ভাত দেয়া হচ্ছে। আর পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিজেই বাইরের হোটেল থেকে খাবার ও ফল কিনে আনছেন। পুরান ঢাকার নয়াবাজারে অবস্থিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালের একধিক ভর্তি রোগী এ তথ্য জানান।

জানা গেছে, গতকাল রোববার পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৪৬ জন করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি ছিল। এ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন মহানগর জেনারেল হাসপাতালটিকে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়। চিকিৎসাসেবা দিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রয়োজনীয় লোকবল ও প্রতিদিন একজন রোগীর খাবারের জন্য সরকারের তরফ থেকে ৩০০ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে খাবারের জন্য প্রচলিত বরাদ্দের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি টাকা করোনা রোগীর জন্য বরাদ্দ হলেও পর্যাপ্ত খাবার সঙ্কটের অভিযোগ করেন এখানকার রোগীরা। তা ছাড়া হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসার শুরু থেকেই নানা অব্যবস্থাপনা, ডাক্তার-নার্স ও স্টাফ সঙ্কটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া সময়মতো রোগীর খাবার সরবরাহ না করায় সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত সপ্তাহ থেকে রোগীর খাবার সঙ্কট, পঁচা ও বাসি খাবার প্রদান এবং পর্যাপ্ত ফলমূল সরবরাহ না করায় রোগীরা বাধ্য হয়ে বাইরের বিভিন্ন দোকান থেকে খাদ্য সংগ্রহ করছেন।

মহানগর জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা: প্রকাশ চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত করোনা রোগীর পথ্য মেনুতে বলা হয়, সকালের নাশতায় ৩০০ গ্রাম পাউরুটি, একটি ডিম, ৪০০ গ্রাম তরল দুধ, একটি বড় আকারের কলা ও ১০০ গ্রাম চিনি বরাদ্দ রয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে ৯৫ টাকা। দুপুর ও রাতের মেনুতে ৩৫০ গ্রাম চাল ও মাছ বা মুরগির গোশত বা খাসির গোশতসহ সবজিতে বরাদ্দ ২০৫ টাকা।
হাসপাতালে ১০ থেকে ১২ জন রোগী গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে জানান, সকালে চার পিচ রুটি, এক গ্লাস দুধ ও একটি ডিম পরিবেশন করা হয়। আর দুপুর ও রাতে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম ওজনের মাছ বা গোশতসহ সবজি ও পাতলা ডাল দেয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ওইসব তরকারি মসলাবিহীন রান্না করার কারণে অধিকাংশ রোগী খেতে পারেন না। তা ছাড়া নাশতার মধ্যে প্রায়ই পচা ডিম ও বাসি রুটি দেয়ার অভিযোগ করেন তারা। গতকাল সকালে পচা ডিম দেয়া হয়েছে। রুটি ও কলা খাওয়ার মতো না। ভাত থেকে দুর্গন্ধ আসে। তাই মাঝে মধ্যে নিজেদেরই বাইরে থেকে খাবার কিনতে হয়।

তাদের আরো অভিযোগ, গত দুই সপ্তাহ থেকে রোগীকে সময়মতো খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে না। দুপুরের খাবার বিকেল গড়িয়ে গেলেও দেয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া যৎসামান্য খাবার দিচ্ছে তাও পচা ও বাসি হওয়ায় খাবার ফেলে দিতে হচ্ছে। রোববার সকালেও পচা ডিম ও বাসি পাউরুটি দেয়া হয়। এ জন্য অধিকাংশ করোনা রোগী নিজে গিয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনেছেন।

এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ডায়েটেশিয়ান আবু সাইদ সরকার নয়া দিগন্তকে খাবার সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় সময়মতো খাবার তৈরি ও সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। কিন্তু আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স দুরন্ত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কবির হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যে রোগীরা খাবার ছিনিয়ে নেয়ায় অনেকে খাবার পান না। এ ছাড়া দু-একটা পচা ডিম পড়তেই পারে। তবে অন্যান্য অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন তিনি।

মহানগর জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা: প্রকাশ চন্দ্র রায় নয়া দিগন্তকে বলেন, নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া লোকবল সঙ্কটের কারণে অনেক সময় সেবা দিতে বিঘœ সৃষ্টি হয়। জনবল এসে গেলে দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877