শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ইয়েমেনি নারীদের জীবনযাত্রা

ইয়েমেনি নারীদের জীবনযাত্রা

যাইনুল আবেদীন ইবরাহীম:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইয়েমেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতা সত্ত্বেও নারীরা সামাজিক রীতিনীতি ও আচার ব্যবহারে বিশ্বের অন্য নারীদের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
ইয়েমেনের নারীদের কারা ভালো অবস্থানে আছে, শহরের নারীরা নাকি গ্রামের নারীরা? এ নিয়ে ইয়েমেনিদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে। আমিরা ওয়াচ্ছাবি নিউ অ্যারাবকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পল্লি অঞ্চলে বসবাসকারী নারীরা শহরে বসবাসকারী নারীদের থেকে বেশি কষ্টে আছে। পারিবারিক বিভিন্ন চাপ ও শারীরিক বিভিন্ন কষ্টকর কাজ তাদের করতে হয়। অথচ তারা যথাযথ প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত।’ বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে আমিরা বলেন, গ্রামের মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের কষ্টকর কাজ আঞ্জাম দিতে হয়। যেমনÑ চাষাবাদ, পশুখাদ্য ব্যবস্থা করা, গবাদিপশু দেখাশোনা করা, মাথায় ও কাঁধে করে দূরবর্তী জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করা। অপরদিকে শহরের মহিলাদের এসব কাজ করতে হয় না।
ওয়াচ্ছাবি আরও বলেন, গ্রামীণ মহিলারা বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত। যেমনÑ শিক্ষা বঞ্চিত, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া; ফলে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে না, ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। সাধারণত শহরের মহিলারা এসব সমস্যার সম্মুখীন হয় না।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিক গ্রামীণ মহিলারা অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের বিনিময়ে আর্থিক কোনো ধরনের সুবিধা পায় না। এ কারণে মহিলারা দুর্বলমনা হয়ে পড়ে। কেননা বাড়াবাড়ি করলে সে তাকে একা রেখে চলে যেতে পারে বা তাকে তালাক দিয়ে দেবে, সে ভয়ে থাকে। ফলে জীবন ধারণের সর্বনিম্ন প্রয়োজনটুকুও তারা মেটাতে পারে না।
তিনি বলেন, পল্লি অঞ্চলের মহিলারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বভাবজাত সহজ-সরল। বিশেষ করে পোশাক-পরিচ্ছদ ও আচার-আচরণে ইত্যাদি। উদ্যমী যুবক আবদুল ইলাহ তাকি ‘নিউ অ্যারাব’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, শহুরে ও গ্রামীণ মহিলাদের মাঝে বিভিন্ন পার্থক্য রয়েছে। গ্রামের মহিলারা পুরুষদের থেকে নির্যাতন ও নিকৃষ্ট আচরণের শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, শহরের মহিলারা এর চেয়ে খুব ভালো অবস্থায় আছে, তা-ও বলা যায় না। তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। তাদের সঙ্গে অন্যদের আচরণের ক্ষেত্রেও রয়েছে তাদের অনাস্থা।
শহুরে নারীদের অবস্থা ঠিক ফরাসি উপনিবেশের সময়ে সিরীয় নারীদের অবস্থার মতো। তারা দেখতে খুবই সুন্দর। তারা নিজেদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পাশাপাশি গ্রামের মহিলাদের প্রতি স্বামীরা যেমন যতœবান তার চেয়ে বেশি যতœবান তাদের স্বামীরা। কিন্তু তারা অনেক বিষয়ে বাধাপ্রাপ্ত। তাদের অধিকাংশ সময় ঘরেই থাকতে হয়। সামাজিক জীবনে তাদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
তাকি আরও বলেন, শহুরে স্বামী বা বাবারা অনেক সময় তাদের স্ত্রী বা মেয়েদের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দেন। এক্ষেত্রে তারা আগেই গন্তব্য সম্পর্কে জেনে নেন ও তাদের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেন। তারা গাড়িতে চলাচলের সময় অভিভাবকরা সতর্ক থাকেন। কেউ যেন যৌন হয়রানি করতে না পারে এবং কারও সঙ্গে যেন অবৈধ সম্পর্ক তৈরি না হয়Ñ এদিকেও তারা সজাগ দৃষ্টি রাখেন। অপরদিকে গ্রামের মহিলারা তাদের আশপাশের লোকজনের বাড়িতে আনাগোনা করতে পারেন। এক্ষেত্রেও তারা বান্ধবী, স্বামী কিংবা নিকটাত্মীয়ের সামনে মুখ ঢেকে চলাফেরা করেন।
উল্লেখ্য, গ্রামের অধিকাংশ লোকই একে অপরের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক গ্রামের নারীরাই পানি আনা কিংবা চাষাবাদের সময় গান গেয়ে থাকেন। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী ক্ষেতের কিনারায় বসে নাশতা করেন। পাশ দিয়ে কেউ অতিক্রম করলে তাকে নাশতায় শরিক হওয়ার জন্য আহ্বান করেন।’
অপরদিকে শহরের নারীদের কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতির হার সামান্য। পুরুষের তুলনায় নারীরা ১৮ শতাংশ কাজ করে থাকে। তারা পুরুষ কলিগের মতো স্থানীয় শ্রমনীতি অনুযায়ী অধিকার ভোগ করতে পারে না। উম্মে হানা কামিল ‘নিউ অ্যারাব’কে বলেন, গ্রামের তুলনায় শহরের মহিলাদের বৈশিষ্ট্য হলো সে বিভিন্ন কাজ করতে পারে, যা দ্বারা সে আর্থিক সচ্ছলতা লাভ করে। ফলে স্বামীদের শারীরিক ও মানসিক অন্যায় নির্যাতন থেকে তা দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও স্বামীদের সঙ্গে পরিবারের ভরণপোষণে মহিলারা অংশগ্রহণ করে থাকে। স্বামী সচ্ছল হলে কিছু বেতন নিজের কাছে সঞ্চিত রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তিন বছর ধরে সরকারি বেতন বন্ধ থাকায় অনেক যুবকই চাকরিজীবী মহিলাদের বিয়ে করার প্রতি ধাবিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা বয়সে অনেক বড় হলেও পুরুষরা বিয়ে করতে তাদেরই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তবে আশার কথা হলো, গত চল্লিশ বছরে গ্রাম ও শহরÑ উভয় স্থানেই নারীদের শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়ে আসছে।

-নিউ অ্যারাব অবলম্বনে

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877