স্বদেশ ডেস্ক: তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) উৎপাদনে এক দশকের বেশি সময় ধরে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে কাতার। মাঝে কিছুদিনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার কাছে এ অবস্থান হারালেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে কাতারের কাছ থেকে এ অবস্থা দখল নিতে থেমে নেই প্রতিপক্ষরা। মরিয়া হয়ে কাজ করছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো। তবে বসে নেই কাতারও। দেশটি এখন এলএনজি উৎপাদন বৃহৎ আকারে বাড়াতে জোরেশোরে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে ২০২৭ সাল নাগাদ এলএনজির বার্ষিক উৎপাদন ১২ কোটি ৬০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে কাতার। খবর রয়টার্স ও গ্যাসওয়ার্ল্ড ডটকম।
বর্তমানে কাতারের বার্ষিক এলএনজি উৎপাদনের পরিমাণ ৭ কোটি ৭০ লাখ টনের মতো। কিন্তু ২০২৭ সালের মধ্যে উৎপাদন প্রায় ৬৪ শতাংশ বাড়াতে চায় দেশটি। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে হাইড্রোকার্বনের উৎপাদন সক্ষমতা দৈনিক ৬৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে বর্তমানে দেশটির দৈনিক উৎপাদন ৪৮ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের সমান। এ লক্ষ্যপূরণে এরই মধ্যে দেশটি অনেকগুলো তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে খনন ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় এনার্জি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান কাতার পেট্রোলিয়ামের প্রধান নির্বাহী সাদ আল কাবি এলএনজির উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। সেখানে তিনি জানান, নতুন নতুন কূপ খনন এবং সন্তোষজনক উন্নয়ন কাজের ফলে নর্থ ফিল্ডের মতো মেগা প্রকল্প থেকে এলএনজির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ নর্থ ফিল্ডে এরই মধ্যে ১৭ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুটের মতো গ্যাস মজুদের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, নর্থ ফিল্ড হলো বিশ্বের শীর্ষ গ্যাসক্ষেত্র। ইরানের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় এ ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে কাতার। এছাড়া এ ক্ষেত্র থেকে সবচেয়ে কম খরচে গ্যাস উত্তোলন করা যায়। যার ফলে নর্থ ফিল্ড থেকে এলএনজি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে সেটি কাতারের অর্থনীতির জন্য অন্যতম আশীর্বাদ হয়ে থাকবে। কাতার পেট্রোলিয়ামের শীর্ষ এ কর্মকর্তা আরো জানান, নতুন এ গ্যাস ফিল্ডের ফলে দ্রুত দুটি অতিরিক্ত এলএনজি মেগা ট্রেনের (অবকাঠামো) কাজ শুরু করা যাবে। যাদের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টনের মতো। এর আগেও এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর কথা জানিয়েছিল কাতার। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সাল নাগাদ এলএনজির বার্ষিক উৎপাদন ১১ কোটি টনে উন্নীত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে সে সময় চারটি এলএনজি ট্রেন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়; যা থেকে ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হিলিয়াম উৎপাদন করতেও সক্ষম হবে কাতার। এর ফলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে হিলিয়ামের যে সংকট, সেটি দূরীকরণেও কাতার এককভাবে সক্ষম হবে বলে মনে করা হয়।
এমন একটি সময় কাতারের পক্ষ থেকে এলএনজি উৎপাদনের বড় ধরনের পরিকল্পনার কথা জানানো হলো, যখন অন্যতম উৎপাদক দেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহের ফলে জ্বালানি পণ্যটির দাম নিম্নমুখী। তবে কাতারের এমন উদ্যোগ প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য উৎপাদক দেশও খুব একটা কোণঠাসা করতে পারবে বলে মনে করেন না খাতসংশ্লিষ্টরা। কারণ এলএনজির বাজারে কাতারের আধিপত্য ঠেকাতে ও বাজার দখল নিতে এসব দেশও সমানভাবে নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। এর মধ্যে চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে চার কোটি টনে দাঁড়াতে পারে। আর কাতারের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পাল্লা দিয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এরই মধ্যে দেশটি বড় বড় এলএনজি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জির পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কাতারের সমপরিমাণ এলএনজি উৎপাদন করতে সক্ষম হবে অস্ট্রেলিয়া।