স্বদেশ ডেস্ক:
দুপুরের রান্না শেষে ছেলেকে গোসল করানোর জন্য চুলায় পানি গরম করে বালতিতে ঢেলে রেখেছিলেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা সুরাইয়া খাতুন। হঠাৎ দৌড়ে এসে গরম পানিতে হাত দিয়েছে তিন বছরের সিয়াম। সুরাইয়া বলেন, গরম পানিতে ছেলের হাতের বেশ খানিকটা পুড়ে গেছে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
শীতে এমন নানা কারণেই দগ্ধ হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। ব্যাপক চাপ থাকে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। আর এই পোড়া রোগীর ৬০-৭০ শতাংশ শিশু ও নারী। ১৫ শতাংশ বয়স্ক। শিশু ও বৃদ্ধ রোগী বেশির ভাগ দগ্ধ হচ্ছেন গরম পানি, চা-কফি, গরম ডাল থেকে। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা অনেক রোগী এসেছেন, যারা আগুন পোহাতে গিয়ে কাপড়ে আগুন লেগে দগ্ধ হয়েছেন। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, এ হাসপাতালে গত বছর চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৬৭১ জন। এর মধ্যে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার ২৬১ জন। মারা গেছেন ১ হাজার ১৮৯। গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়ে প্রতি মাসে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার। এর পরের তিন মাস অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন গড়ে ৮ হাজার রোগী। কুমিল্লা থেকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এসেছেন রাজিয়া বেগম (৪২)। তার স্বামী শামসুল আলম বলেন, রাতের খাবারের জন্য ডাল গরম করতে গিয়ে রাজিয়ার শাড়ির নিচের অংশে চুলা থেকে আগুন লেগে যায়। কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসা করে এর পর ঢাকায় নিয়ে এসেছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজিয়ার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। হাসপাতালে আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শীতের মৌসুমে অন্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ দগ্ধ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছেন। এসব রোগীর ৬০-৭০ শতাংশই নারী-শিশু। এসব রোগী গরম পানি, চা, কফি অসতর্কতাবশত শরীরে পরে দগ্ধ হচ্ছেন। অনেকে রান্না করতে গিয়ে চুলার আগুনে দগ্ধ হচ্ছেন। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া রোগীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।’ এ সময় শিশুদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তিনি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে বছরে ৫ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্নভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে কতজন দগ্ধ হন, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে এমন ঘটনা বেশি ঘটছে উত্তরাঞ্চলে। আগুনে পোড়া রোগীদের অধিকাংশই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কিংবা তার বেশি সময় পর হাসপাতালে আসেন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বৈজ্ঞানিক সাময়িকী এলসেভিয়ারে গত আগস্টে ‘বার্ন ইনজুরিস অ্যান্ড অ্যাকুট বার্ন ম্যানেজমেন্ট ইন দ্য রুরাল অ্যারিয়াস ইন নর্দান বাংলাদেশ : আ হাউসহোল্ড সার্ভে’ শিরোনামে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার ওপর একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, ৫৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের অন্তত একজন কোনো না কোনোভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। অগ্নিদগ্ধের ৪১ শতাংশ কারণ উন্মুক্ত স্থানে আগুন। দগ্ধ ৩০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা নেয়নি; যার বড় কারণ অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রংপুর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে এসব হাসপাতালে অন্তত ৫০০ জন ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ রোগীও আছে।