শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫২ অপরাহ্ন

অনিশ্চয়তা ও সম্ভাবনায় নতুন বছরের অর্থনীতি

অনিশ্চয়তা ও সম্ভাবনায় নতুন বছরের অর্থনীতি

স্বদেশ ডেস্ক:

সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৪ সালজুড়ে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য সাধারণ মানুষকে পিষ্ট করেছে। বিভিন্ন কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য আর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। মাঝামাঝিতে এসে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ঘটে সরকারের পতন। এর সূত্র ধরে নানা ধরনের অস্থিরতার প্রভাব পড়ে শিল্প-বাণিজ্যে। এ ছাড়া বছরজুড়েই বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা ও আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতাও ছিল। অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২৫ সালের যাত্রা শুরু হলো। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৫ সালও অনিশ্চয়তার বছর। তবে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে পারলে নতুন বছরে অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে পারে। এ জন্য অর্থনীতিকে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সাধারণত উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্নআয়ের মানুষ যে কোনো উসকানিতে রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। তাই স্থিতিশীল অর্থনীতি এবং রাজনীতির প্রয়োজনেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ২০২৫ সাল অনিশ্চয়তার বছর। অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আগামী বছর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো- অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে হবে। প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা ঠিক না হলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে না।

অর্থনীতির জন্য বড় উদ্বেগ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে, না হলে আইনশৃঙ্খলা ফিরবে না। কারণ বাজারে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিম্নআয়ের মানুষ যে কোনো উসকানিতে রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়েছে। তবে শুধু নীতি সহায়তা নয়, বাজার ব্যবস্থাপনায়ও কাজ করতে হবে। মুদ্রাবিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। বাজারে বড় বড় খেলোয়াড় রয়েছে। তাদের আচরণ দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনীতির প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক প্রয়োজনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকিং খাতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এটি সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কিছু আইন পরিবর্তন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট দেবে। নতুন করে যাতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি না হয়, আগামী বাজেটে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবৃদ্ধির জন্যই বাজেট ঘাটতি কমাতে হবে। দারিদ্র্য মানুষের পাশে থাকতে হবে। সামাজিক নিরপাত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। অপচয়মূলক ব্যয় কমাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তন হয়েছে, তা তো ব্যথাবিহীন নয়। অর্থনীতিতে তা বেদনা বাড়িয়েছে। তার পরও বছর শেষে কিছু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সংস্কার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলাফল হয়তো আগামীতে পাওয়া যাবে।

নতুন বছরে দেশের অর্থনীতি ভালো যাবে বলে মনে করছেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ২০২৪ সালে সব ধরনের জঞ্জাল বিদায় নিয়েছে। আগামী বছর অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবে বলে আশা করছি। রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লাগবে। বাড়বে রিজার্ভও। তবে সুদের হার কমাতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সুদের হার বাড়ালেও তা কাজে আসেনি। সুদের হার বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগে ধাক্কা লেগেছে। সুদের হার কমলে একদিকে বিনিয়োগ বাড়বে, অন্যদিকে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। উচ্চ সুদের হারের কারণে শেয়ারবাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আশা করেন, আগামী বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে। ব্যবসার পরিবেশ সাবলীল হবে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ২০২৫ সাল চ্যালেঞ্জিং হলেও আশঙ্কা রয়েছে। তারা ধারণা করছেন, অস্থিরতা কাটিয়ে বছরের প্রথমাংশে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে গতি বাড়বে। তবে নতুন বছরে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, ২০২৪ সাল নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেছে। ২০২৫ সালে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে চায়। সে সুযোগটা করে দিতে হবে। চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, উৎপাদন ধরে রাখতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট কাটাতে হবে। ব্যাংক খাতের সমস্যার সমাধান করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। উসকানির মাধ্যমে হুটহাট যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়, এগুলো বন্ধ করতে হবে।

রপ্তানি প্রসঙ্গে বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, সামনে আমাদের জন্য সুযোগ রয়েছে। যদি বাধা ও চ্যালেঞ্জগুলোকে সঠিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় তা হলে আমরা আশা করি, ২০২৫ সালে রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে আমাদের পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ তৈরি হবে। সেটিকে কাজে লাগাতে হলে আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য ব্যবসা সহজ করা, বন্দর আধুনিকায়ন ও সহজ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে পিছিয়ে রপ্তানি বাড়াতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে উদ্যোগ নিতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877