বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৩ অপরাহ্ন

৪৬ পা, ছাত্রদলের অগ্নিগোলায়ন

৪৬ পা, ছাত্রদলের অগ্নিগোলায়ন

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ঐতিহাসিক দিনে ছাত্রদল। ৪৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই ছাত্র সংগঠন আজ তার দীর্ঘ যাত্রার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে। ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার দিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত, তাদের ভূমিকা দেশের ছাত্র আন্দোলন, গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও সমাজ পরিবর্তনে অবিচ্ছেদ্য।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ছাত্র সংগঠন। শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতি স্লোগান নিয়ে এই সংগঠনটি ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় ঢাকার নয়া পল্টনে অবস্থিত। বিএনপির ভ্যানগার্ড নামে পরিচিত এ সংগঠন। ভবিষ্যতের নেতৃত্বের এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনিয়তা অনুভব করেন একই অবস্থা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার জনপ্রিয়তার জন্য অনেক তরুণ অনুপ্রানিত হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদান করেন। কাজী আসাদুজ্জামানকে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) আহ্বায়ক করে ওই দিন ছাত্রদলের প্রথম কমিটি প্রকাশ করা হয়। বর্তমান সহ মোট ১৯টি কমিটি পার করেছে ছাত্রদল।

৮০ দশকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদে উল্লেখযোগ্য অবস্থান ছিল এ ছাত্র সংগঠনটির। ৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা এর পরের সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামেও সামনের সারিতে দেখা গেছে ছাত্রদলকে। যদিও বর্তমান সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সংগঠনটির অতীত ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে শেষ ২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশি নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বিএনপির এই সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন পরিবেশে মুক্ত বাতাসে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। দীর্ঘ দেড় দশক সাংগঠনিকভাবে কোনঠাসায় থাকা ছাত্রদল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সারাদেশে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়েছে। ছাত্রসমাজের আস্থা ধরে রাখতে সংগঠনটি তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার সাড়ে চার দশকে এসে অতীতের সোনালী গৌরব পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ছাত্রদল।

তবে কমিটিতে আধিপত্য বিস্তার, দীর্ঘদিন কমিটি পুনর্গঠন ও হালনাগাদ না করার কারণে নেতৃত্বের বিকাশও ঘটাতে পারছে না বিএনপি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এদিকে সংগঠনের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভক্ষণে দীর্ঘ রক্তস্নাত ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের বিজয়ী হিসেবে ছাত্রসমাজসহ দলীয় নেতাকর্মীদেরকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে সংগঠেনের বর্তমান সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

গত ১ মার্চ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাত সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি অনুমোদন করা হয়। ওই সময় আংশিক কমিটিতে রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি ও নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলেরও নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে কমিটি গঠনের তিন মাসের মধ্যে গত ১৫ জুন ছাত্রদলের ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে কাছের ব্যক্তিদের বেশি প্রাধান্য দিয়ে কমিটি হওয়ায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেই সমালোচনা হয়। বিশেষ করে বৃহত্তর উত্তরাঞ্চলের নেতৃত্ব সংখ্যা একেবারেই নাম মাত্র। তাছাড়া বেশি ত্যাগী নেতাকর্মীকে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

রাকিব-নাছিরের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পাঁচ মাসের মাথায় সৃষ্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখে ছাত্রদল। একপর্যায়ে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটলে সারাদেশে কর্মী সভা শুরু করে সংগঠনটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রণীত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়, কর্মী সভাসহ নানামুখী ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ছাত্র সমাজের আস্থা ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালায় ছাত্রদল।

এদিকে আন্দোলন সংগ্রামের মূখ্য ভুমিকায় থাকা ঢাকা মহানগর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শাখায় ছাত্রদলের দীর্ঘদিন কমিটি না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীতে ১১টি ইউনিটে নতুন কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই কমিটি অনুমোদন করেন।

ইউনিটগুলো হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর পূর্ব এবং ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘গেল বছরে আমাদেরকে দু’টি আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হয়েছে, ২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২৪ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচন যেটা ছিল, নির্বাচনী বাস্তবতায় সেটা আমাদেরকে বেশি পীড়া দিয়েছে, মামলা হামলা ব্যাপক নির্যাতন। ২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আমরা আমাদের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। তারপর পরবর্তী বাস্তব নতুন ধারার ছাত্র রাজনীতির ওপর দিয়ে আমরা যাচ্ছি। কোনো প্রকারের নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সমস্যা হয় এটি আমরা করবো না, সেই ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। রানিং স্টুডেন্টদের হাতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এবং তরুণ প্রজন্মকে, তরুণ প্রজন্ম আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে, যারা মাদক-সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকবে, ছাত্র রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করা, সেই ধরনের সচেতনমূলক কর্মকাণ্ড নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

এছাড়া ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল অগ্র-সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রদলের ত্যাগ ছিল নজিরবিহীন। শুরু থেকেই ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের সাথে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছে। বর্তমানে গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য ছাত্রদল ছাত্র-তরুণদের মধ্যে তারেক রহমান প্রণীত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তাবনার পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করছে। আমরা সারাদেশ থেকে তরুণদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ছাত্রদল একুশ শতকের উপযোগী মেধাভিত্তিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চর্চায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নেতাকর্মীরা যাতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করছি। মেধাবী তরুণদেরকে নিজ নিজ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ প্রদান এবং ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত সকল দাবির পক্ষে আমরা কাজ করছি। সাম্য ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের লক্ষ্য।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা: তৌহিদুর রহমান আউয়াল বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল ছাত্রদলের। ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনীতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সময়োপযোগী দিকনির্দেশনায় ছাত্রদল বিচক্ষণতার ছাপ রেখেছে। সারা বাংলাদেশে ৩৮টি টিম গঠন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদলের জনপ্রিয়তা ও ইমেজ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নতুন বছরে ছাত্রদল তার গৌরবজ্জ্বল অতীতকে কাজে লাগিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।’ ইনশাআল্লাহ।

ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মো: সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে আমরা বাসায় থাকতে পারিনি, সেইসাথে মামলা-হামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। নতুন বছরের প্রত্যাশা ছাত্রদল হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশ্রয়স্থল ও প্রত্যাশা পূরণের সংগঠন।’

কর্মসূচী :
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সকল জেলা ও মহানগর ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকাসহ দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ১১টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাত, দুপুর ১২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামের সামনে রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেলে সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার হলগুলোর মধ্যে সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি আন্তঃহল ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখায় বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গুলিস্তান স্টেডিয়ামে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের আটটি টিমের মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশের সকল জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের উদ্যোগে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, দাবা যেকোনো একটি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877