বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৩ অপরাহ্ন

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত : পুড়েছে হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তদন্ত রিপোর্ট

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত : পুড়েছে হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তদন্ত রিপোর্ট

স্বদেশ ডেস্ক:

সচিবালয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আগুন লাগার ঘটনায় পুড়ে গেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের হাজার কোটি টাকার মূল তদন্ত রিপোর্ট। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে নেওয়া ২৫ হাজার কোটি টাকার ২১ প্রকল্প নিয়ে ওই তদন্ত করা হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া বেশ কয়েকটি ভবিষ্যৎ প্রকল্পেরও তদন্ত করা হয়।

২২ ডিসেম্বর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের কাছে প্রতিবেদনের মূল কপি জমা দেওয়া হয়। ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ার তিন দিনের মাথায় সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এদিকে সচিবালয়ে মূল তদন্ত প্রতিবেদন পুড়লেও আলাদা একটি কপি রয়েছে আগারগাঁওয়ে থাকা আইসিটি টাওয়ারে। তদন্তকারী কর্মকর্তার অফিস ওই ভবনে থাকায় রিপোর্টের কপিটি থেকে যায়।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তদন্ত কাজের প্রায় সবকিছু আইসিটি টাওয়ার থেকে করা হয়েছে। তাই এখানে আলাদা একটি কপি সংরক্ষণ করা আছে। এর আগে উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে তদন্তের মূল প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়’।

গত বুধবার দিবাগত রাতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আগুন লাগার ঘটনায় পুড়েছে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলা। এ চার তলায় পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের অফিস ছিল। বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে আগুন লাগে। ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও এর অধীন সংস্থা-দপ্তরগুলোতে ২০০৯ সাল হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেওয়া ২১টি প্রকল্প মূল্যায়ন করে ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। ৮ আগস্ট ওই কমিটি গঠন করা হয় যার আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান। উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী সরাসরি এই তদন্তের দিকনির্দেশনা দেন। পরে এতে যুক্ত হন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের পলিসি অ্যাডভাইজার ফায়েজ আহমদ তৈয়ব।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ চিত্র দেখে বিস্মিত তদন্ত কমিটি। এসব ব্যয় করা হয়েছে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পে পাওয়া গেছে লুটপাটের চিত্র। কেনাকাটা হয়েছে আকাশচুম্বী দামে। খরচ হয়েছে বেশুমার। প্রকল্পগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু অঙ্গ ও কার্যক্রম প্রকল্পের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং অপ্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অপ্রয়োজনীয় অংশ প্রকল্প হতে বাদ দিলে সরকারের ৬ হাজার ৯৮১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সাশ্রয় হতে পারে।

তারা জানান, এমন অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বের আওতায় পড়ে না। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে অর্থের অপচয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন ও অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ করায় জমি কেনা বাবদ অর্থের অপচয়, অধিক ভূমি উন্নয়ন ব্যয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রশস্ত, অতিরিক্ত উচ্চ ও অতিরিক্ত অবকাঠামো যেমন আইটি ট্রেনিং সেন্টারে গুদাম নির্মাণ করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের অপচয় করা হয়েছে।

এদিকে ওই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ২২ ডিসেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দেশের জনপরিসরে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে একটি ভয়াবহ লুটপাট ও অপব্যবস্থাপনার খাত হিসেবে পরিচিত করিয়ে দিয়ে গেছে। দেশের গণমাধ্যমে এসব নিয়ে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আওয়ামী অপকর্মে দেশের ডিজিটাল ইকোনমি এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতিও নাজুক হয়েছে। এমন বেপরোয়া দুর্নীতির ওপর দাঁড়িয়ে গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্তির পরে এই খাতের অপখরচ ও মেগা দুর্নীতি থামানোর জন্য যথাযথ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমি তদন্তকারী দলকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এমন তদন্ত প্রতিবেদন যাতে অতীতের মতো ফাইলবন্দি হয়ে না থাকে। বরং আগামী ১০০ দিনের কার্যক্রমে সুপারিশগুলো অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছি। আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের অপখরচের এই মডেল কন্টিনিউ না করে তার নির্দেশনা দিয়েছি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877