স্বদেশ ডেস্ক:
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত স্পেনের উদ্ধারকারী দলগুলো এখনো নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত দুই শ’র বেশি মানুষ বন্যায় মারা গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যায় সেতু ধ্বংস হয়েছে। শহর ঢেকে গেছে কাদা পানিতে। পানি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য সঙ্কটে থাকা অনেক জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অধিবাসীদের অনেকে বলেছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আরো দ্রুত বন্যার ঝুঁকির সতর্কতা দিলে হয়তো আরো প্রাণ বাঁচানো যেত।
ভ্যালেন্সিয়ার আলদাইয়া শহরের জুয়ান গনজালেস বিবিসিকে বলেছেন যে সেখানে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, এই এলাকায় বন্যার প্রবণতা আছে। এটা দু:খজনক যে আমাদের স্থানীয় সরকার বন্যা আসছে জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অগাস্টিন নামে স্থানীয় আরেকজন বলেছেন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি যে ফ্লাটে থাকতেন সেটিতে বন্যার পানি উঠেছে এবং তাদের সবাইকে তার বাবা মায়ের কাছে সরে যেতে হয়েছে।
ভ্যালেন্সিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ভয়াবহ আবহাওয়া পার করলেও স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য এখনো সতর্ক সঙ্কেত আছে। সেখানে আরো ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতে এর মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হুয়েলভা অঞ্চলও রয়েছে। কারতায়া শহরে মাত্র ১০ ঘণ্টায় যেই বৃষ্টি হয়েছে, তা সাধারণত সেখানকার দুই মাসের বৃষ্টির সমান।
আরো দক্ষিণের জেরেজ শহরে প্রবল বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বেড়ে যাওয়া শত শত পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তবে এরপরেও প্রশ্ন উঠছে যে বিপর্যয়কালীন সেবা কতটা কাজ করেছে। কারণ তাদের বিরুদ্ধে ধীরগতিতে কাজ করার অভিযোগ এসেছে। যদিও স্পেনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আছে।
আঞ্চলিক সরকারের আওতায় দ্যা সিভিল প্রটেকশন অ্যাজেন্সি মঙ্গলবার ভ্যালেন্সিয়া শহরের ভেতরে ও আশেপাশের মানুষের মোবাইল ফোনে জরুরি বার্তা দিয়েছিল।
এর মধ্যেই বন্যার পানি অনেক এলাকায় ঢুকে পড়েছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই ধ্বংসযজ্ঞ তৈরি করেছিল।
মাইরেইয়া ভ্যালেন্সিয়ার বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর কাছেই বাস করেন। তিনি বলেছেন যে জনসাধারণ মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
‘অনেকে তাদের গাড়ির মধ্যে ছিল, তারা বের হতে পারেনি। তারা পানিতে ডুবে গেছে।’
হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী এখন স্পেনের সামরিক বাহিনী ও জরুরি দলগুলোকে উদ্ধার ও পরিচ্ছন্ন করার কাজে সহায়তা করছে।
ভ্যালেন্সিয়ার আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট কার্লস ম্যাজন বলেছেন আর সৈন্য মোতায়েন করতে যাচ্ছেন তারা।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ সামাজিক মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি তাদের ‘সংহতি এবং স্প্যানিশ সমাজের প্রতি তাদের সীমাহীন ত্যাগের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের যা যা দরকার তাই করা হবে বলে তার সরকারের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত শহর পাইপোর্তায় এখনো পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা ত্রাণ সহায়তার ধীরগতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
‘এখানে যথেষ্ট দমকল কর্মী নেই। বেলচা পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি,’ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলছিলেন ৩৩ বছর বয়সী ফার্মাসিস্ট। তিনি তার বন্ধুর ঘর থেকে কাদা পরিষ্কারে সহায়তা করছিলেন।
বেশ কিছু মানুষকে লুটপাটের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। আলদাইয়া শহরের একজন অধিবাসী বলেছেন, তিনি পরিত্যক্ত সুপারমার্কেট থেকে জিনিসপত্র চুরি করতে দেখেছেন। কারণ লোকজন ‘কিছুটা মরিয়া হয়ে’ উঠেছে।
এবারের দুর্যোগের জন্য বছরের বাকি সময় ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়াকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর কারণে স্পেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের বহু এলাকায় বৃষ্টির পানি শুষে নেয়ার ক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়া বন্যার তীব্রতার জন্য জলবায়ুর উষ্ণায়নও ভূমিকা রাখছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়েদার এট্রিবিউশন চরম আবহাওয়ার পেছনে বৈশ্বিক সর্তকতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি গ্রুপ। তারা বলছে, স্পেনে ১২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে।
সূত্র : বিবিসি