স্বদেশ ডেস্ক:
মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের (রাবেতাহ আল আলামি আল ইসলামী) মহাসচিব শায়খ মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা ভারত সফরে এসেছেন। সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠক করেছেন তিনি।
ভারতে যে সময় শরীয়াহ আইনে সংশোধনের জোরালো দাবি উঠেছে, সেই সময় সৌদি আরবের আলেম ও সাবেক আইনমন্ত্রীর ভারত সফর এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
উদারবাদী বলে পরিচিত ডা. ঈসা গতবছর আরাফাহর ময়দানে হজের খুতবা দেন। সেখানে তিনি শরীয়াহ আইনের মাহাত্ম্য তুলে ধরেন। অথচ ভারতে মোদির আমলেই শরীয়াহ আইনে পরিবর্তনের দাবি উঠেছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নিজস্ব টুইটারে লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের সেক্রেটারি জেনারেল হিজ এক্সেলেন্সি শায়খ মোহাম্মদ আল ঈসার সাথে বৈঠক করেন।
ডা. মোহাম্মদ ঈসা অর্গানাইজেশন অফ মুসলিম স্কলার-এর চেয়ারম্যান। তিনি মোদির সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মানবিকতার বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তেমনই মোহাম্মদ আল ঈসার টুইটারে লেখা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিজ এক্সেলেন্সি নরেন্দ্র মোদির সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন আলোচনা হয়েছে। আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছি। মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে সম্প্রীতি ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি নিয়ে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদির নিজের টুইটারে লেখা হয়েছে, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, উগ্রপন্থা রোধ, বিশ্বশান্তি এবং দুই দেশের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন মজবুত করার লক্ষ্যে আলোচনা হয়েছে।
নয়াদিল্লিতে ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে বৈঠকের বিষয় নিয়ে ডা. ঈসা লেখেন- মুসলিম ও অমুসলিম শিক্ষাবিদদের সাথে আলোচনা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি নিয়ে ওয়ার্ল্ড লিগ কাজ করছে বিশ্বব্যাপী সেটাও জানানো হয়। সেইসাথে ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে একতাকে উৎকৃষ্ট মডেল হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
মুসলিম দেশগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ডা. ঈসাকে উদারবাদী আলেম আখ্যা দেয়া হয়। তিনি ইসরাইলের ধর্মীয় নেতৃত্বের সাথে এবং পোপের সাথেও বৈঠক করেছেন। ভারতে এসে অক্ষরধাম মন্দিরে যাওয়ার এবং এখানকার হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে তার।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি কাজ করে চলেছেন। বলা হচ্ছে, ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে তিনি ভারতে এসেছেন ছয় দিনের জন্য। একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী আলোচনা করতে পারেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তার এই সফরের পেছনে শুধু সহিষ্ণুতার শিক্ষা ও সম্প্রীতির বার্তা দেয়ার উদ্দেশ্য রয়েছে, নাকি অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। দিল্লির জামা জুমার নামাজে অংশগ্রহণের কথা রয়েছে ডা. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসার।
বুধবার রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাথেও সাক্ষাৎ করেন ডা. ঈসা। ভারতে এই প্রথমবার এসেছেন মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা রাবেতাহ আল আলামি আল ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ঈসা।
রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেন, সহিষ্ণুতা ও সংযমের চেতনা বাড়াতে এবং আন্তঃধর্ম সংলাপ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ যে কাজ করে চলেছে, তার জন্য শুভেচ্ছা জানাই।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত বহু সাংস্কৃতিক ও বহুভাষী দেশ। এখানে ভিন্ন জাতি ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর সমাজ বিভিন্নতার মাঝে একতা নিয়ে আনন্দ প্রকাশ ও গর্ব করে থাকে। মুসলিম ভাইবোনের জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে ভারত।
তিনি বলেন, ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ। দুই দেশের মানুষের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বহুদিনের। আমাদের দুই দেশের কাছেই বিশ্ববাসীকে দেয়ার জন্য বহুমূল্যবান প্রজ্ঞা ও শিক্ষা রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ভারতের মতো সৌদি আরবও সন্ত্রাসবাদের কড়া নিন্দা করে। ডা. ঈসার ভারত সফরে উগ্রবাদ অসহিষ্ণুতা ও আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার প্রেরণা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু।
সূত্র : ইটিভি ভারত উর্দু ও পুবের কলম