স্বদেশ ডেস্ক: পুষ্টিচাহিদা পূরণে দেশি বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী আবিষ্কারÑ ভিটামিন-এ ও বিটা ক্যারোটিন জিঙ্কসমৃদ্ধ ‘গোল্ডেন রাইস’ অবমুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইআরআরআই)Ñ এ দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ সহযোগিতায় জেনেটিক্যালি (জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে) উদ্ভাবন করা হয়েছে নতুন এ ধান। এটি হাইব্রিড নয়, ইনব্রিড। ফলে কৃষকও এ জাতের বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। এখানেই কৃষি বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ইতোমধ্যে এটির পরীক্ষা করা হয়েছে, যা পরিবেশ ও মানবদেহে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক গতকাল এমন আভাস দিয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশ ইতিপূর্বে যে ধানের জাতগুলো আবিষ্কার করেছে তার মধ্যে গোল্ডেন রাইস অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি জাত। মন্ত্রী আমাদের সময়কে জানান, গোল্ডেন রাইস জাতটি হাইব্রিড নয়। কোনো ফসলের জাত যদি হাইব্রিড হয়, তা হলে সে জাতের বীজ কৃষক পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয় না। কারণ হাইব্রিড জাতের বীজ রাখার জন্য কৃষকের যে উচ্চ প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকা দরকার, তা না থাকায় সেটি উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা কঠিন। সে জন্য হাইব্রিড বীজ সবসময়ই আমদানি করতে হয় অথবা কোনো কোম্পানিকে উৎপাদন করতে হয়; কিন্তু গোল্ডেন রাইস ইনব্রিড হওয়ায় তা সহজেই কৃষক পর্যায়ে অন্যান্য স্বাভাবিক সব বীজের মতোই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা যাবে। অন্যদিকে স্বাভাবিক ধানের মধ্যে বিশেষ জেনেটিক পদ্ধতিতে ভিটামিন-এ ও বিটা ক্যারোটিন জিঙ্ক সংযোজন করায় এতে পরিবেশ এবং মানবদেহে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এ জাতের ধানের পরীক্ষাও করা হয়েছে। শিগগির জাতটি অবমুক্ত করা হবে।
পরিবেশের ওপর এর প্রভাব বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পাওয়া যায়নি। যদি বাংলাদেশে প্রকৃতভাবেই গোল্ডেন রাইস উৎপাদনের জন্য অবমুক্ত করে দেওয়া হয় তবে তা কৃষিতে আরেকটি যুগান্তকারী অর্জন হবে। বাংলাদেশের মাটি, জল ও আবহাওয়ায় চাষকৃত বিআর-২৮ ও বিআর ২৯-এর মতোই গোল্ডেন রাইসের উৎপাদন পাওয়া যাবে। বাড়তি প্রাপ্তি হবে ভিটামিন। বাংলাদেশের সব পর্যায়ের মানুষ, বিশেষ করে নিম্নআয়ের যারা পুষ্টিকর খাবারের অভাবে ভোগেন, তাদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে গোল্ডেন রাইসÑ বলেন মন্ত্রী।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। এখন সব ডডুমেন্টসহ বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষের দিকে।