শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একসময় বিশ্বে রোল মডেল হবে চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এলজিইডি বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল ফের আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় উপজেলা নির্বাচন জনগণের সাথে প্রতারণা করার নির্বাচন : রিজভী মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক
বিধি ভেঙে এইচএসসির প্রশ্নপত্র তৈরি, পরে বাতিল ৪০০ সেট

বিধি ভেঙে এইচএসসির প্রশ্নপত্র তৈরি, পরে বাতিল ৪০০ সেট

স্বদেশ ডেস্ক;

এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ১১ জন শিক্ষককে দিয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তাদের ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে তাদের প্রণয়ন করা ৪০০ সেট প্রশ্নপত্র। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার এ শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়ে পরে নিয়োগ বাতিল করায় তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। অন্যদিকে শিক্ষাবোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উঠেছে ছয় দশকের প্রথা ও বিধি ভঙের অভিযোগ।

এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভুলভ্রান্তি এড়িয়ে নতুনভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের নভেম্বরে সারাদেশে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পাবলিক পরীক্ষার জন্য ১৯৬১ সালে প্রণীত ‘পাবলিক পরীক্ষা প্রবিধনামালা’ অনুসরণ করে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শিক্ষকদের মধ্য থেকে পরীক্ষা সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তিনটি দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেন। এগুলো হলো প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী, মডারেটর বা প্রণীত প্রশ্নপত্র যাচাই-বাছাইকারী এবং পরীক্ষক, যিনি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন। প্রবিধানমালার ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে- নিকটতম সম্পর্কের কেউ ওই বছরের পরীক্ষায় অংশ নিলে ওইসব শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে এমনকি প্রশ্নপত্রের পাতলা পাত ছেদনের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন না।

জানা যায়, গত জুলাই মাস থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য ১৯৮ প্রণেতা এবং ১১২

পরিশোধক বা মডারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়, যারা বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক। সৃজনশীল বিষয়ের ক্ষেত্রে যাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ আছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ শিক্ষক পান মডারেটরের দায়িত্ব। আর অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ বা দক্ষ শিক্ষকদের দেওয়া হয় প্রণেতার দায়িত্ব। প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য ৬ জন করে দায়িত্বরত থাকেন। এর মধ্যে ৪ জন সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ও দু’জন নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করেন। আর প্রতিটি প্রশ্নপত্র যাচাই-বাছাই ও পরিশোধনের দায়িত্বে থাকেন ৪ জন করে মডারেটর।

অভিযোগ উঠেছে, এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ পাবলিক পরীক্ষা প্রবিধানমালায় উল্লিখিত বিধি সঠিকভাবে অনুসরণ করেনি। এমনকি তাদের নিয়োগের শর্তাবলিতেও এ প্রবিধানের উল্লেখ নেই।

কথা বলে জানা যায়, জুলাই মাসে লকডাউন শুরুর আগে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তা শিক্ষাবোর্ডে জমা দেন। ১৬ আগস্ট থেকে পরিশোধকদের প্রণীত প্রশ্নপত্র পরিশোধন কার্যক্রম শুরু হয়। ওইদিন সূচনাসভায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণচন্ত্র নাথ ঘোষণা দেন, যাদের সন্তান চলতি বছরের পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তাদের কেউ মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। হঠাৎ এ ঘোষণা শুনে সভায় উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে অস্বস্থি তৈরি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ১১ জন মডারেটর জানান, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় তাদের সন্তানরা অংশ নিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে ১১ শিক্ষক প্রশ্নপত্র মডারেশনের দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আবার ১০ জন প্রশ্নপত্রও প্রণয়ন করেছেন। এ অবস্থায় শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মৌখিকভাবে ১১ জনের নিয়োগ বাতিল এবং নতুনভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ঘোষণা দেন। তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের নিয়ে মডারেশন সংক্রান্ত সভা হয়েছে।

বাদ পড়া ১১ জনের মধ্যে আটজনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন চট্টগ্রাম কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক দৌলতুর রহমান, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রামের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রউফ, চট্টগ্রামের গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল খালেক, চট্টগ্রাম কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৃষ্ণা বড়ুয়া, একই কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউনুছ হাছান, রাঙামাটি সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল হাসনাত মো. মফিজুল হক, সাতকানিয়া সরকারি কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মুজিবুর রহমান এবং আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবাশীষ ধর।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ১১ জন মডারেটরের সন্তান এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বিষয়টা এমন যে, একজন মডারেটর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক, কিন্তু তার ছেলে পড়ালেখা করেন মানবিক বিভাগে। আইনে কিন্তু তার মডারেটর হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা নেই। তার পরও আমরা বলেছি আপনারা কেউ থাকতে পারবেন না। তাদের নিয়োগ অফিসিয়ালি বাতিল করেছি। বাতিল শিক্ষকদের তৈরি প্রশ্নপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা মডারেটর, একজনও সেটার নন। তারা কেউ প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জড়িত ছিলেন না।

অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী বাতিল ১১ জন প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জড়িত না থাকার দাবি করলেও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণচন্দ্র নাথ বলেন, তারা যেসব প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন সেগুলো আমরা বাতিল করেছি। নতুনভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হচ্ছে। ৪০০ সেট বাতিল করা হয়েছে। ২২ আগস্টের মধ্যে আমরা নতুন প্রশ্নপত্র পেয়ে যাব।

চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যাপক মো. আবদুর রউফ বলেন, আমি সেটার এবং মডারেটর উভয়ের দায়িত্বে ছিলাম। আমি সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত নই। একজনের অনুপস্থিতিতে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমাকে কোনো ধরনের শর্তের কথা জানানো হয়নি। যখন জানতে পেরেছি, আমি নিজ থেকে সারেন্ডার করেছি। আমি মনোবিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্র তৈরি করেছি, কিন্তু আমার ছেলের পাঠ্যসূচিতে ওই বিষয় নেই, তারপরও আমি সারেন্ডার করেছি।

অধ্যাপক দৌলতুর রহমানের ছেলে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমার ছেলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি প্রশ্ন করেছি মানবিক বিভাগের দর্শন বিষয়ের। আমাকে মডারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিয়োগপত্রে এ সংক্রান্ত কোনো শর্তাবলি উল্লেখ ছিল না। আগেও আমি সেটার এবং মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেছি। তখন উল্লেখ থাকত, এবার ছিল না। নিয়োগের শর্তাবলিতে বিষয়টি উল্লেখ থাকলে এ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, প্রতিবছর প্রশ্নপত্র প্রণেতা, উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী, পরিশোধকসহ নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাবোর্ডের গোপনীয় শাখা থেকে তদন্ত হয়। তদন্তে কোনো শিক্ষকের বিষয়ে আপত্তি পেলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় না। কিন্তু এবার সে ধরনের কোনো তদন্তেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, গোপনীয় শাখার লোকজন তো অফিস স্টাফ। তাদের তো এসব বিষয় জানা থাকার কথা নয়। আমরা তো ১১ জনকে বাতিল করে নতুনভাবে ১১ জনকে নিয়োগ দিয়েছি।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণচন্দ্র নাথ বলেন, সেটার-মডারেটর সবাই পুরনো ও অভিজ্ঞ। তাদের তো বিষয়টি জানা থাকার কথা। আমাদের জানার বিষয় নয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877