বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো মানুষ ইতিবাচকভাবে নেয়নি: রিজভী

হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো মানুষ ইতিবাচকভাবে নেয়নি: রিজভী

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারতে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো বাংলাদেশের মানুষ ইতিবাচকভাবে নেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ বুধবার চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শহীদ গেন্ডারিয়া আদর্শ স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিতে এসে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে হত্যাকারী শেখ হাসিনাকে রাখার জন্য তার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে, এটাকে বাংলাদেশের মানুষ ইতিবাচকভাবে নেয়নি। যেখানে গণতন্ত্র থাকবে, সেখানে আইনের শাসন থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখেছি ভারত আইনের শাসন মানে না। সবসময় আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে কাজ করে ভারত।’

যারা আন্দোলনকারীসহ শিশু-বাচ্চাদের হত্যা করেছে, তাদের কি বিচার হবে না? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-পুলিশ সদস্যরা মিডিয়ার সামনে প্রকাশ্যে শিশু, তরুণ, যুবকদের গুলি করে হত্যা করেছে। অথচ তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?’

তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের হত্যাকারীদের সবার আগে গ্রেপ্তার করে বিচারে মুখোমুখি করা উচিত ছিল সরকারের। এ সরকার তো রক্তস্নাত সরকার, কারণ শিশু-যুবক-কৃষক-শ্রমিকদের রক্তের ওপর এ সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকারের দায়িত্ব জনগণের আহারের নিশ্চয়তা দেওয়া।’

আনাসের চিঠি পড়ে আপ্লুত হয়ে রিজভী বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, এই বাচ্চারা এত উদ্দীপ্ত দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, একটা মহান কিছু আবিষ্কারের জন্য, আদায়ের জন্য। এই বয়সে যে তাদের (ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহীদরা) এমন সংকল্প হতে পারে, এই চিঠিতে আমি তা পেয়েছি।’

আনাসের চিঠিটি পড়ে শোনান এবং বলেন, ‘এই চিঠিটি পড়ার পর আমাদের জীবনকে মনে হয়েছে তুচ্ছ, এই আত্মদানকারী বীর শহীদরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে , আমার মনে হয়েছে, তাদের কাছে আমরা তুচ্ছ, আমরা ম্লান হয়ে গেছি।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এই নিষ্পাপ ছেলেগুলোকে কেন শেখ হাসিনার পুলিশ হত্যা করেছে? শুধু শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই করেছে। আর তার পরিবার ও কাছের মানুষদের আঙুল ফুলে কলাগাছ করার জন্য। এজন্যই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এই বাচ্চাদেরও হত্যা করতে দ্বিধা করেনি।’

আজও শেখ হাসিনার জন্য কেউ কেউ মায়াকান্না করে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আমি আনাসের ও আনাস ইয়াসিনের পরিবারের আর্তনাদ ও মায়েদের কান্না শুনতে বলি তাদের। যাদের রক্তের বিনিময়ে পরিবর্তন পেলাম, ১৭ বছরের বসে থাকা হিংস্র ক্ষুধার্ত হায়েনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও শেখ হাসিনার জন্য যারা মায়াকান্না কাঁদেন, তাদের প্রতি ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কিছু বলার নেই।’

ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘এটাই ইউনূস সরকারকে বুঝতে হবে। কেন আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার প্রেসক্রিপশনে সাবান, গুঁড়া দুধ ও ওষুধের দাম বাড়বে? কেন সেগুলোর ওপর ভ্যাট বাড়ানো হবে? এটার জন্যই কি আনাস -জুনায়েদরা রক্ত দিয়েছে?’

তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি তার জিনিসপত্র স্বাভাবিক মূল্যে কিনতে না পারে তাহলে জুনায়েদ-আনাস-ইয়াসিনদের রক্ত বৃথা যাবে। আজ ইতিহাস বিকৃত করেছে শেখ হাসিনা, আর শহীদরা তো রক্ত দিয়েছেন, প্রকৃত ইতিহাস লেখার জন্য। তাহলে এখনো কেন আওয়ামী লীগের দোসররা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে থাকবে?’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আজ জানুয়ারির ৮ তারিখ, এখনো ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের বই পায়নি। আবার দেখা গেছে প্রিন্টিং মিসটেক, এজন্য কে দায়ী? এর জন্য দায়ী যারা মুদ্রণের সঙ্গে জড়িত, আর সেই ব্যক্তি হচ্ছেন শেখ হাসিনার একজন ঘনিষ্ঠ দোসর।’

রাকসুর এই সাবেক ভিপি বলেন, ‘মানুষের রক্ত পান করতে আনন্দ বোধ করতেন শেখ হাসিনা, সেই মানুষটি আবার ফিরে আসবে, তার কোনো বিচার হবে না? যারা এই শিশু-বাচ্চাদের হত্যা করেছে, তাদের কি বিচার হবে না?’

অনেক প্রতিষ্ঠান স্বৈরাচারে দোসরদের নামে করা হয়েছে অভিযোগ করে এগুলোর নাম পরিবর্তন করে জুলাই-আগস্টের শহীদদের নামে করার আহ্বান জানান তিনি।

‘আমরা বিএনপি পরিবার’এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন ও সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সঞ্চালনায় আয়োজিত আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে সংগঠনের উপদেষ্টা আশরাফ বকুল, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি জাহিদুল কবির, বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আউয়ালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877