স্বদেশ ডেস্ক:
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি পাওয়ার আগেই পাহাড় কেটে ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু করা ভুল পদক্ষেপ বলে স্বীকার করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) পরিচালকের সভাকক্ষে ওই প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে অংশীজনের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ দায় স্বীকার করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে চমেকে’র শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পাহাড় কেটে প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমনটি সংবাদ প্রকাশের পর আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজেই আমাকে ফোন করে বলেছেন– পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু করার। তবে পাহাড়ধস থেকে হাসপাতাল ভবন রক্ষার জন্যই চীনা প্রযুক্তিতে পাহাড়কে ‘স্লোপ’ বা ঢালু করা হচ্ছে। পাহাড় ড্রেজিং করা হচ্ছে। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে চলতি সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট-ইআইএ) জমা দেওয়া হবে। চলতি মাসের শেষে অধিদপ্তরের বোর্ড মিটিং আছে। আশা করছি সেখানে ইআইএ অনুমোদন পেয়ে যাবে।’
চট্টগ্রাম নগরের চট্টেশ্বরী সড়কের গোয়াছিবাগানের মেডিক্যাল ছাত্রাবাসসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় চীনের আর্থিক সহায়তায় ১৫০ শয্যার বার্ন হাসপাতালটি গড়ে তোলা হচ্ছে। গত বছরের ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় ২৮৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। হাসপাতালটির নির্মাণকাজ ও যন্ত্রপাতি চীনের অর্থায়নে হবে। বাংলাদেশ সরকার ১০৫ কোটি টাকা দেবে।
মতবিনিময় সভায় পরিবেশ রক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি ফারহান এলাহী বলেন, ‘পাহাড়ের ভূমিধস প্রতিরক্ষায় সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হবে। প্রকল্পের জন্য পাহাড়ের যে অংশটি ড্রেজিং করা হচ্ছে সেখানে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে।’
চীনা ঠিকাদারের প্রতিনিধি প্রকৌশলী গুই জি ইউ বলেন, ‘পরিবেশগত বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে। প্রকল্পের জন্য পাহাড়ের সামনে খালি জায়গাটা নেওয়া হয়েছে পরিবেশের কথা চিন্তা করে। সম্ভাব্য সবকিছু মাথায় রেখে প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রকৌশলী তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রকল্প নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কনসার্নটা যৌক্তিক। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তাছাড়া পুরো প্রকল্পের কাজ করছে চাইনিজরা। প্রকল্প নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা চলমান থাকলে চীনা ঠিকাদার চলে যাবে। আর তারা একবার চলে গেলে ফের আনা কঠিন হয়ে পড়বে।’
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং ৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা। ছয়তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের ইউনিটটির প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি। দ্বিতীয় তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চমতলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।
মতবিনিময় সভায় কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রামের চার কোটি মানুষের সরকারি চিকিৎসার প্রধান ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ও গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা না থাকায় দগ্ধ রোগীদের ঢাকায় নিতে গিয়ে পথেই প্রাণ হারান অনেকেই। এমন অবস্থায় আশা জাগাচ্ছে নতুন এই উদ্যোগ।
চমেকের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘এখানে শুধু বার্ন চিকিৎসক নয়, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরাও থাকবেন। অত্যাধুনিক সেবা পাবেন রোগীরা।’ জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি হয় গত বছরের ৩০ মার্চ।