শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে ‘সোয়াইন ফ্লু’ নিয়ে কি উদ্বেগের কারণ আছে?

বাংলাদেশে ‘সোয়াইন ফ্লু’ নিয়ে কি উদ্বেগের কারণ আছে?

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশের একজন সাবেক এমপি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে বুধবার মারা যান। তিনি এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাস (যেটি সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস হিসেবে পরিচিত) দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডাক্তার কামরুল হুদা।

সাবেক এই নারী সাংসদ সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও বাংলাদেশে এই রোগ এখন ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে নিশ্চিত করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডাক্তার মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা।

ডাক্তার ফ্লোরা বলেন, ‘এই রোগটিকে এখন সোয়াইন ফ্লু নাম দেয়া যথাযথ হবে না, কারণ শূকর থেকেই যে এই রোগের ভাইরাস ছড়াতে হবে, এমনটি নয়। মানুষের দেহেই এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।’

সারা বাংলাদেশে নিয়মিত ভিত্তিতে এই ফ্লু’এর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে বলে নিশ্চিত করেন সাবরিনা ফ্লোরা।

যেভাবে ছড়ায় সোয়াইন ফ্লু
সোয়াইন ফ্লু সাধারণত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে থাকলে, তার ব্যবহৃত পাত্রে খাবার খেলে বা ওই ব্যক্তির কাপড় পড়লে ফ্লু ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।

সোয়াইন ফ্লু’র উপসর্গ
সাধারণ সোয়াইন ফ্লু’র উপসর্গ সাধারণ ফ্লু’র মতই হয়ে থাকে। জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা, শরীরে ব্যাথা, ঠান্ডা ও অবসাদের মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে ফ্লু হলে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, র‍্যাশ বা পাতলা পায়খানাও হতে পারে।

শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী, ডায়বেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি বা কোনো ধরণের অসুখে ভুগতে থাকা ব্যক্তি ফ্লু’তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই সোয়াইন ফ্লু নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে এর ফলে বিভিন্ন দেশে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

ফ্লু’র ভাইরাসগুলো নিজেদের মধ্যে জিনগত উপাদান অদল বদল করতে পারার সক্ষমতা রয়েছে, তাই কোন ধরণের সোয়াইন ফ্লু বিপজ্জনক হতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না চিকিৎসকরা।

২০০৯ সালে মেক্সিকোতে ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর প্রায় মহামারি আকারে এই ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে নানা দেশে।

ধারণা করা হয়, ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ২ লাখ মানুষ সোয়াইন ফ্লু’তে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ছড়ানোর পর বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।

বাংলাদেশে কী পরিস্থিতি?
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ফ্লু’র পরীক্ষা চালানো হয় এবং সেগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয় বলে বিবিসিকে জানান সাবরিনা ফ্লোরা।

‘খুব বড় সংখ্যায় না হলেও সারা বাংলাদেশেই আমরা এই ফ্লু’র রোগী দেখতে পাই।’ তিনি জানান এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই রোগের হার বেশি থাকে।

‘এই রোগের প্রতিষেধক সরকারের কাছেও রয়েছে, আবার কয়েকটা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবেও তৈরি করছে’, বলেন ডাক্তার ফ্লোরা।

বাংলাদেশে প্রথম সোয়াইন ফ্লু’র উপস্থিতি নিশ্চিত হয় ২০০৯ সালে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু’র টিকাদান কর্মসূচী চালানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেসময় বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে সোয়াইন ফ্লু’র টিকা পাঠায়।

এরপর গত এক দশকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়।

২০১৫ সালে ভারতের কয়েকটি রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পর এই বিষয়টি আবারো আলোচনায় আসে। ফ্লু যেন ছড়িয়ে না পড়তে পারে, তা নিশ্চিত করতে সেসময় নানারকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে।

ফ্লু প্রতিরোধে সেসময় অনেক চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় বন্দরগুলোতে। থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়। সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877