স্বদেশ ডেস্ক:
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশন শুরুর পর বিশ্ব নেতাদের আলোচনায় এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও জলবায়ু সঙ্কটের পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন।
এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন সদস্যদেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। দুই সপ্তাহব্যাপী উচ্চপর্যায়ের সাধারণ বিতর্কের গত কয়েকদিনের আলোচনায় নেতারা আগামী বছরের জন্য তাদের অগ্রাধিকার তুলে ধরেন। এছাড়া উন্নয়ন ও জলবায়ু সঙ্কটের পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এতে সহযোগিতার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিদেরও সমালোচনা করেন।
‘বিশ্বাস, পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিতর্কও হয়েছে।
বিশেষ বিতর্কের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে ধারাবাহিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে গত কয়েকদিনের আলোচনায় পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, প্রতিটি অধিবেশনজুড়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও জলবায়ু সঙ্কটের পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
আলোচনা পর্বে সাধারণত বিশ্বের প্রত্যেক দেশের প্রতিনিধি নিজ নিজ রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন এবং সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
আলোচকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এই সম্মেলনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মহামারি মোকাবিলা ও পরমাণু অস্ত্র বাতিল করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
অধিবেশনে সাধারণ বিতর্কের প্রথম ভাষণে অধিবেশনের নেতা ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ডেনিস ফ্রান্সিস তার মেয়াদে বৃহত্তর বহুমুখিতা ও সমান সুযোগকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানান।
আর প্রথম দেশ হিসেবে আলোচনায় অংশ নেয়া ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। তার ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে গুরুত্ব দেন।
চলতি বছরের প্রথম দিকে ক্ষমতা গ্রহণ করা লুলা এরই মধ্যে অঙ্গীকার করেছেন, পরিবেশ ইস্যুতে ব্রাজিলকে আবারো বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে নিয়ে যাবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ আমাজন বনের সুরক্ষা জোরদার করবেন। এরপর ভাষণ দেয় স্বাগতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈশ্বিক নেতা হিসেবে ওয়াশিংটনের ভূমিকা তুলে ধরেন।
সাধারণ বিতর্কে সাধারণত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। গত বছরের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছিল করোনাভাইরাস মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো, ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা। এবারো আলোচনায় এসব গুরুত্ব পাচ্ছে।
আগস্টের শেষ দিকে মার্কিন দূত টমাস-গ্রিনফিল্ড জানান, তিনি প্রত্যাশা করছেন, বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশ ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াবে। চীনকে নিয়ে উদ্বেগ, প্রশান্ত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ও মানবাধিকার ইস্যুও আসতে পারে। বিশেষ করে অনেক বিশ্লেষক জাতিসঙ্ঘে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
আফ্রিকার দেশগুলোর সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো মনোযোগ পেতে পারে। এ ছাড়া সুদান ও ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক সঙ্ঘাত, আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কট, বৈশ্বিক অভিবাসী সঙ্কটে ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ ও লাতিন আমেরিকার ভূমিকাও আলোচনায় স্থান পাচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ শুরু হওয়ার দুই মাস আগে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মাত্র ৫১টি দেশ নিয়ে তৈরি হওয়া সংস্থাটির বর্তমান সদস্যদেশ ১৯৩। জাতিসঙ্ঘের প্রধান শাখা ছয়টি। যার মধ্যে তিনটি শাখাকে মনে করা হয় সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।
ফলে দেশগুলো মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন ও অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে।
জাতিসঙ্ঘ সনদ অনুসারে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেসব ইস্যু নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা করা হচ্ছে না, সেগুলো সমাধানের দায়িত্বও রয়েছে এই পরিষদের। সাধারণ অধিবেশনে জাতিসঙ্ঘের বার্ষিক বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। পরিষদের ছয়টি কমিটির মধ্যে একটি বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষা মিশনের অর্থায়নের বিষয়টি সরাসরি দেখভাল করে।