স্বদেশ ডেস্ক:
আজ ২১ আগস্ট। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ২৪ জন নিহত এবং অন্তত ৩০০ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই এখনো পঙ্গু অবস্থায় দিন যাপন করছেন। নানা শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করছেন।
২০১৮ সালের অক্টোবরে এই মামলায় বিচারিক আদালত ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় প্রদান করেন। ২১ আগস্টের নির্মম ঘটনাকে উপলক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, ‘২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনার পর ওই সময় মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের হয়। প্রথমে এই মামলাটির তদন্ত করেন মতিঝিল থানার এসআই আমির হোসেন। পরে মামলাটি ডিবি পুলিশে স্থানান্তর হলে মামলার তদন্ত করেন ডিবির ইন্সপেক্টর মো: শামসুল ইসলাম। এর পরে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর হয়। সিআইডিতে স্থানান্তরের পর মামলার তদন্তের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় তৎকালীন এএসপি আব্দুর রশিদ এবং মুন্সি আতিকের ওপর। এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়কের আমলে তদন্ত করেন সিআইডির এএসপি ফজলুল কবির। তিনি ২০০৮ সালের ১১ জুন ওই মামলায় ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে মামলা দু’টির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। মামলাটির অধিকতর তদন্ত শেষে সিআইডির এস এস আব্দুল কাহহার আখন্দ ২০১১ সালের জুলাই মাসে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট প্রদান করেন। ইতোমধ্যে ২১ আগস্টের ঘটনায় মুফতি হান্নানসহ ৮ হরকাতুল জিহাদ সদস্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আদালতে দাখিলকৃত আবেদনে গ্রেনেডের উৎস এবং এই ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছে তা জানার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
এর আগে সিআইডি কর্মকর্তা ফজলুল কবিরের দেয়া চার্জশিটে বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, তার ভাই মাওলানা মফিজুর রহমান ওরফে অভি, পিন্টুর ছোট ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আবু তাহের, শরীফ শাহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার জাফর, মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল, আবুল কালাম বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, আনিসুল মুরসালিন ওরফে সুজন, তার ভাই মহিবুল মুক্তাকিন ওরফে শাহীন, হোসাইন আহম্মেদ ওরফে তামিম, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, ইকবাল, মাওলানা আবু বকর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, রফিকুল ইসলাম গাজী ওরফে শফিক ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে সবুজ ওরফে রতন, উজ্জল ওরফে রতন, জাহাঙ্গির হোসেন ওরফে জাহাঙ্গির বদর ও মাওলানা খলিলুর রহমান ওরফে খলিলকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ফজলুল কবিরের চার্জশিটে ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হলেও আরো ছয়জনের জড়িত থাকার ব্যাপারে তথ্য ছিল। তাদের মধ্যে দু’জন মারা যাওয়ায় এবং বাকি চারজনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ না থাকায় চার্জশিট থেকে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়। ওই সময় মুরসালিন এবং মুত্তাকিন ভারতের কারাগারে বন্দী ছিল।
২০১১ সালের ৩ জুলাই এই মামলায় আদালতে নতুন করে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান, বিএনপির সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আব্দুর রহিম, হারিছ চৌধুরী, হানিফ পরিবহনের মালিক মো: হানিফ, ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুর রহমান, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (আইডিপি) আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুস সালাম, আব্দুল মজিদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই রাতুল বাবু ওরফে বাবুল, পুলিশের সাবেক আইজি শহুদুল হক, আশরাফুল হুদা এবং খোদা বক্স, ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, এসপি ওবায়দুর রহমান, সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, সাবেক এএসপি আব্দুর রশিদ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব:) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল (বরখাস্তকৃত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার এবং মেজর জেনারেল (অব:) এ টি এম আমিন রয়েছেন। এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং ২০০৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ও তিনজন নিহত হওয়ার মামলায় মুফতি হান্নানের ইতোমধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে উচ্চ আদালতে।
২১ আগস্টকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিতদের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে। বাংলাদেশ আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ আবাসভূমিতে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দিনের ঘটনাকে ইতিহাসের একটি কলঙ্কময় ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন বলে উল্লেখ করেছেন। মামলার রায়ের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।