শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জম্মু-কাশ্মীরে কী ঘটছে কেউ জানে না

জম্মু-কাশ্মীরে কী ঘটছে কেউ জানে না

স্বদেশ ডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ সোমবার বিলোপ করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। ফলে এখন থেকে জম্মু-কাশ্মীর

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনে পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে পৃথক করে আরেকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে এরই মধ্যে সারা ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু যে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এতকিছু, সেখানকার জনগণ এই সিদ্ধান্তে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন-এ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না কিছুই। কারণ নিরাপত্তা আশঙ্কার কথা বলে এখনো কাশ্মীরের টেলিফোন, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে ভারত সরকার। পুরো অঞ্চলে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন না সেখানকার কোনো সরকারি কর্মকর্তা। ফলে বাকি দুনিয়ার সঙ্গেও কাশ্মীরিরা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

গতকাল এক খবরে বিবিসি জানায়, কাশ্মীরের রাস্তায় এখন হাজার হাজার সেনা টহল দিচ্ছে। সেখানকার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরের বিবিসি সংবাদদাতা আমির পীরজাদা সোমবার দিল্লির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের অন্যান্য অংশে কী হচ্ছে, তা কেউ জানে না। আমরা কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারছি না। মানুষ ভীষণ চিন্তিত। তারাও জানে না আসলে এখন কী হচ্ছে এবং কী হতে যাচ্ছে।’ ভারতের অন্যান্য স্থানে থাকা কাশ্মীরিরাও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং সে বিষয়ে তাদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। দিল্লিতে থাকা এক কাশ্মীরি ছাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, পরিবারের খবর জানতে তিনি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বার্তা পাঠিয়েছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে কাশ্মীরবাসী স্বাগত জানিয়েছে বলেও রিপোর্টে জানিয়েছেন তিনি। নিজে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতি কড়া নজর রাখতে কাশ্মীরেই আছেন অজিত ডোভাল। সোমবার রাতেই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়ে শ্রীনগরে বৈঠক করেছেন সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং।

এদিকে কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও প্রভাবশালী রাজনীতিক ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে সোমবার রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া কাশ্মীরস পিপলস কনফারেন্সের দুই নেতা সাজ্জাদ লোন এবং ইমরান আনসারিকেও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে গৃহবন্দি ছিলেন তারা। শ্রীনগরের বাড়ি থেকে মেহবুবাকে সরিয়ে নিকটবর্তী সরকারি গেস্টহাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তান সম্পূর্ণ কাশ্মীরের অধিকার দাবি করলেও দুই দেশই রাজ্যটির কিছু নির্দিষ্ট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনেক দিন ধরেই বিদ্রোহ হয়ে আসছে, যার কারণে এখন পর্যন্ত বহু সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। অনেক কাশ্মীরি মনে করেন, সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত, সেটিই ছিল রাজ্যটির ভারতের অংশ থাকার পেছনে প্রধান যুক্তি। ওই অনুচ্ছেদ বিলোপের মাধ্যমে দিল্লির সঙ্গে কাশ্মীর অঞ্চলের সম্পর্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপরিবর্তনীয়।

উদ্বেগ জানিয়ে অ্যামনেস্টির বিবৃতি

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের ফলে ওই অঞ্চলে সহিংসতা বাড়তে পারে বলে ভারতকে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার এক বিবৃতিতে সর্বভারতীয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান আকর পাটেল বলেন, অতিরিক্ত হাজার হাজার নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের গৃহবন্দি করে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে ফেলা হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের সম্পৃক্ততা ছাড়া সেখানকার নিপীড়ন বন্ধ করা যাবে না। অনির্দিষ্ট সময় ধরে জম্মু-কাশ্মীরের টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ রাখা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এগুলো কাশ্মীরের জনগণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার, জানানোর সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এগুলো বাকস্বাধীনতার অখণ্ড অংশ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877