স্বদেশ ডেস্ক:
রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এলেও ডলারের দাম কমছে না। খোলা বাজারে এখনো ডলারের দামে আগুন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের ওপর ছেড়ে দিলেও কমছে না। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে আরও বেড়েছে। খোলা বাজারে কোথাও কোথাও ১২৯ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে মার্কিন ডলারের। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারের মাধ্যমে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। গত ১ জানুয়ারি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তে ব্যাংক ও গ্রাহক আলোচনার মাধ্যমে ডলারের দাম নির্ধারণ করবে। এক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণের আগে ব্যাংক তাদের ডিলার বা বৈদেশিক মুদ্রার নিবন্ধন পাওয়া শাখার সঙ্গে আলোচনা করবে। এর ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারিত হবে।
তবে এসব পদক্ষেপে কমেনি ডলারের দর। এখন নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ডলার। ব্যবসায়ীরা এলসি করতে খোলা বাজার থেকে ডলার কিনতে হয়। ফলে ব্যাংকগুলোও বাইরে থেকে ডলার কিনছে। ১২০ টাকার ডলার দর আন্তব্যাংকিংয়ে ১২২ টাকা দরে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রমজান মাস সামনে রেখে হঠাৎ করে বিভিন্ন খাদ্য পণ্য আমদানির জন্য এলসির পরিমাণ বেড়েছে। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির কারণে ডলার বাজারে চাহিদা বেড়েছে। রপ্তানি আয়ে কোনো সুখবর না থাকায় শুধু রেমিট্যান্স নির্ভরতা দিয়ে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ডলারের দর হঠাৎ করে বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি এক মাসে রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। একক মাস হিসাবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার সেই রেকর্ড ভাঙলো ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এই রেকর্ড রেমিট্যান্স আসার পরেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি ডলারের দর। ব্যাংকগুলো ডলার কেনা ও বেচা দুই ক্ষেত্রেই দাম বাড়িয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো আমদানি, বকেয়া ঋণ পরিশোধসহ অন্যান্য খাতে গ্রাহকদের কাছে প্রতি ডলার বিক্রি করবে সর্বোচ্চ ১২২ টাকা করে। গত সপ্তাহের প্রায় সব ব্যাংক ১২২ টাকা করে ডলার বিক্রি করেছে। গত মঙ্গলবার ১ জানুয়ারি ছিল সর্বোচ্চ ১২০ টাকা। প্রতি ডলারের দাম ২ টাকা বাড়িয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন ডলারের এই বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার দর আগেই সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। যে কারণে আমদানিতেও ডলারের দাম ১২৪ টাকা ছিল। যেসব ব্যাংক বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে, তারা এখনো বাড়তি দামে আমদানিতে ডলার বিক্রি করছে। ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ায় মানি একচেঞ্জগুলোতে এর দাম বাড়ছে। এসব প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা করে ডলার বিক্রি করতে পারবে। তবে খোলাবাজারে এর দাম বেড়ে ১২৮ টাকায় উঠেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১২৯ করেও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন কিছুটা বেশি চাহিদার কারণে হয়তো ডলার দর বাড়তি। ব্যাংকের নিজস্ব লেনদেনে সংকট নেই। এটাই ইতিবাচক। ব্যাংকগুলোতে যে অস্থিরতা ছিল সেটা নেই। বেশির ভাগ ব্যাংকে এখন ডলার পাওয়া যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির পরিবর্তে কিনছে। এতে রিজার্ভ বাড়ছে। ব্যাংকগুলো এলসি অতিরিক্ত চার্জ করছে না। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। খোলা বাজারে দর বেশি থাকলে দ্রুত সেটাও কমে আসবে।