শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন

দিনে ভর্তি প্রায় ১৪শ রোগী, ডায়রিয়ায় ২৫ জনের মৃত্যু

দিনে ভর্তি প্রায় ১৪শ রোগী, ডায়রিয়ায় ২৫ জনের মৃত্যু

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ না কমে প্রতিদিনই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তাদের হাসপাতালে প্রায় এক হাজার চারশ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। যাদের মধ্যে রাজধানীতে বসবাস করা লোকের সংখ্যাই বেশি। এর মধ্যে গত কয়েকদিনে ডায়রিয়ায় কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইসিডিডিআরবির এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, ডায়রিয়ার ভয়াবহতা এতটাই বেড়েছে যে, হাসপাতালে আসার পথেই প্রায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই তীব্র পানিশূন্যতা ছিল। মৃতদের প্রত্যেকেই শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী ইত্যাদি দূবরর্তী এলাকা থেকে মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে আসছিলেন। দূরত্ব এবং রাস্তার তীব্র যানজটের কারণে মারাত্মক পানিশূন্যতায় তাদের মৃত্যু হয়। তবে হাসপাতালে ভর্তির পরে কারও মৃত্যু হয়নি। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত দেশে প্রায় ৫ লাখের মতো মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুজনের।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দূর থেকে রোগীদের মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। স্থানীয় পর্যায়ে সব হাসপাতালেই ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ঢাকার দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের রোগীদের জন্য মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। আমাদের সব হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। কেননা দূরত্ব¡ এবং যানজটে সময়ক্ষেপণের কারণে সময়মতো স্যালাইন না পান করায় পথের মধ্যেই অনেক রোগী শকে চলে

যায়। পথেই মৃত্যু হওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্যানুযায়ী, ঢাকা বিভাগে গত তিন মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ২৪৭ জন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২ হাজার ১৮৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫১ হাজার ৫৯৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৭ হাজার ৬০৩ জন, রংপুর বিভাগে ৩৪ হাজার ৮১৯ জন, খুলনা বিভাগে এক লাখ এক হাজার ৮১৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১১ হাজার ৪০৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩২ হাজার ৯৩৮ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে একজন লক্ষ্মীপুর অন্যজন কক্সবাজারে বাসিন্দা।

অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্ম আসার আগেই পুরো দেশে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে রোগী বেশি। তবে এটি দেশের শুষ্ক মৌসুমের স্বাভাবিক চিত্র। এখনো রোগের বিস্তার অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেনি। বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যন দেখলেই আমরা এর সত্যতা পাই। রোগের প্রাথমিক অবস্থাতে চিকিৎসা শুরু করলে আতঙ্কের কিছু থাকে না। ইতিমধ্যে মৌসুম শুরুর আগেই কলেরা শনাক্তকরণ কিট, প্রয়োজনীয় খাবার স্যালাইন নিশ্চিতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলায় পর্যায়ে সব কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মার্চ মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ১০৫৭ জন। এরপর যথাক্রমে ১৭ মার্চ ১১৪১ জন, ১৮ মার্চ ১১৭৪ জন, ১৯ মার্চ ১১৩৫ জন, ২০ মার্চ ১১৫৭ জন, ২১ মার্চ ১২১৬ জন, ২২ মার্চ ১২৭২ জন, ২৩ মার্চ ১২৩৩ জন, ২৪ মার্চ ১১৭৬ জন, ২৫ মার্চ ১১৩৮ জন, ২৬ মার্চ ১২৪৫ জন, ২৭ মার্চ ১২৩০ জন, ২৮ মার্চ ১৩৩৪ জন, ২৯ মার্চ ১৩১৭ জন, ৩০ মার্চ ১৩৩১ জন, ৩১ মার্চ ১২৮৫ জন, ১ এপ্রিল ১২৭৪ জন, ২ এপ্রিল ১২৭৪ জন, ৩ এপ্রিল ১২৮৫ জন, ৪ এপ্রিল ১৩৮৩ জন এবং ৫ এপ্রিল ১৩৭৯, ৬ এপ্রিল ১৩৭০ জন, ৭ এপ্রিল ১৩৮২ জন এবং ৮ এপ্রিল ১৩৭৫ জন এবং ৯ এপ্রিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৮১১ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০০৭ এবং ২০১৮ এর পরে এবারই দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

এ বিষয়ে আইসিডিডিআরবির হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। তবে এবার সময়ের কিছুটা আগেই রোগী আসতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে রোগের জীবাণুর ধরন পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে। তবে সেটি গবেষণা না করে বা নিশ্চিত না হয়ে বলা সম্ভব নয়। এবারে সিভিয়ার ডায়রিয়া এবং কলেরায় আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কলেরা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত সময়ের তুলনায় অনেক বেশি, যা মোট আক্রান্তের ২৩ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে স্বাভাবিক অ্যান্টিবায়োটিকগুলো কলেরার জীবাণুর ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রয়োজন। কারণ সিভিয়ার ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীর চিকিৎসায় সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে না পারলে সংক্রমণ পরিস্থিতি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশাল মেডিসিনের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ বলেন, ডায়রিয়ার সঙ্গে কলেরার পার্থক্য রয়েছে। তবে কলেরাও একধরনের ডায়রিয়া। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন বা এর অধিকবার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। নানা ধরনের জীবাণু দিয়ে ডায়রিয়া হতে পারে। যেমন- ই-কোলাই, ভিব্রিও কলেরি (ব্যাকটেরিয়া), রোটা (ভাইরাস) ইত্যাদি। যে ডায়রিয়া ভিব্রিও কলেরি জীবাণু দিয়ে সংঘটিত হয় তাকে কলেরা বলে। এতে বারবার পানির মতো তরল পায়খানা ও বমি হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877