স্বদেশ ডেস্ক:
হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। গত ছয় দিনে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৮৮০ জন। রোগীর এই সংখ্যা ইতিপূর্বে যে কোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড।
আইসিডিডিআর,বির চিকিৎসকরা বলছেন, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৩ শতাংশই কলেরায় আক্রান্ত। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে সিভিয়ার রোগীও রয়েছেন। মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তন, অত্যধিক গরম, অপরিচ্ছন্ন খোলা খাবার গ্রহণ এবং দূষিত পানীয় পান করাই হঠাৎ ডায়রিয়া বাড়ার অন্যতম কারণ।
আইসিডিডিআর,বি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মার্চ হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ১০৫৭ জন। এর পর যথাক্রমে ১৭ মার্চ ১১৪১ জন, ১৮ মার্চ ১১৭৪, ১৯ মার্চ ১১৩৫, ২০ মার্চ ১১৫৭ এবং ২১ মার্চ ১২১৬ জন ভর্তি হন। ২০০৭ এবং ২০১৮-এর পরে এবারই এত রোগী ভর্তি হলো। অর্থাৎ গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু আগেই দেশে ডায়রিয়ার ভয়াবহ প্রকোপ শুরু হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালপ্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়।
তবে এবার সময়ের কিছুটা আগেই রোগী আসতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে রোগের জীবাণুর ধরন পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে। তবে সেটি গবেষণা না করে বা নিশ্চিত না হয়ে বলা সম্ভব নয়। এবারের রোগীদের মধ্যে সিভিয়ার ডায়রিয়া এবং কলেরা আক্রান্ত রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত সময়ের তুলনায় অনেক বেশি, যা মোট আক্রান্তের ২৩ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক কারণেই বেশকিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রহণের প্রয়োজন পড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মানুষের করণীয় কিছু নেই, তবে সতর্কতামূলক
ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ডায়রিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মধ্যে পানি ফুটিয়ে পান করা অন্যতম। এ ছাড়া ডায়রিয়া হলে স্যালাইন ও অন্যান্য তরল খাবার, যেমন ডাবের পানি, চিড়া ভিজিয়ে তার পানি, ডালের পানি, ভাতের মাড়, চালের গুঁড়ার জাউ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। রাস্তার পাশের খোলা খাবার বা শরবতজাতীয় পানীয় পরিহার করতে হবে। যে কোনো খাবার গ্রহণের আগে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করাও ডায়রিয়া প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধসহ অন্যান্য খাবার তাদের যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়ানোই সমীচীন।
রাজধানীর বাইরের চিত্র জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এখনো ডায়রিয়ায় আক্রান্তের কোনো তথ্য আসেনি। এমনকি তারা এই তথ্য এখনো সংগ্রহ করছে না। তাই দেশের পরিস্থিতি এখনই তাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখেছি, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ঢাকায় বেশি। ইতোমধ্যে মৌসুম শুরুর আগেই কলেরা শনাক্তকরণ কিট, পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা এবং উপজেলায় পর্যায়সহ সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবার ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে পারে। সবাই যেন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে।