স্বদেশ ডেস্ক;
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নামার আগে দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং নেতাদের কার কী ভূমিকা, তা দেখতে চায় বিএনপি। কারণ হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, সভা-সমাবেশে অনেকেই সরকার পতনের জন্য দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে রাজপথের কর্মসূচি চান।
কিন্তু কর্মসূচি দিলে ওইসব নেতাকেই আর রাজপথে দেখা যায় না। এই অবস্থায় নেতাদের বক্তব্যের ওপর নয়; মাঠের প্রকৃত চিত্র ও নেতাদের ভূমিকা দেখে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা। দলের নেতারা আরও বলেন, নেতাদের ভূমিকা ও দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখতে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও সরকারবিরোধী ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণকে আন্দোলনমুখী করতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ১১ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৮১ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে দলটি এরই মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ ১৩ সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশ করেছে। আজ বুধবার একযোগে ৬৮ সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমবারের মতো প্রতিটি জেলায় একজন করে কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ‘আজকের এই কর্মসূচি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসব সমাবেশে কোন জেলার সাংগঠনিক সক্ষমতা কেমন, সেখানে নেতাদের ভূমিকা কী, তা দেখা হচ্ছে। এই সমাবেশের ওপর অনেক জেলা কমিটির ভাগ্য নির্ধারণ হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দিক থেকে এমন নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমাবেশে প্রধান অতিথি করা হয়েছে। এখান থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের দক্ষতাও দেখবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।’
তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, যে কোনো কর্মসূচি করার ক্ষেত্রে তাদের জন্য মূল বাধা প্রশাসন। তারা অনুমতি না দিলে সেখানে কর্মসূচি করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এই বাধার মধ্যে কেউ যদি সন্তোষজনক কর্মসূচি করে, সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হবে। যেনতেন অজুহাতে কেউ কর্মসূচি না করলে সেখানে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রশাসন বাধা না দিলে কর্মসূচি কত বড় হয়, তা আমাদের দল বিভিন্ন সময় প্রমাণ করেছে। আমরা আশা করি, এমন একটি জনস্বার্থমূলক কর্মসূচিতে প্রশাসন বাধা দেবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য চাল-ডাল-তেলসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ছে। সরকারের কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজারের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। বিএনপির মতো একটি দায়িত্বশীল দল তো বসে থাকতে পারে না।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত যেসব সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশ হয়েছে, সেসব সমাবেশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতাদের ভূমিকা যাচাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ডের কাছে ফরিদপুরের সমাবেশ নিয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে ব্যর্থ করতে তার বিরোধীরা কাজ করেছে। কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেন, ফরিদপুর শামা ওবায়েদ ও নায়াব ইউসুফের (ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা দলের আহ্বায়ক) নেতৃত্বে বিভক্ত।
পরিস্থিতি শান্ত করতে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শামা ওবায়েদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘পছন্দের নেতা হোক বা না হোক, যখন যিনি বক্তব্য রাখবেন, তখন নেতাকর্মীদের উচিত সবার পক্ষে সেøাগান দেওয়া। এখানে কেউ বিশেষ নেতা নয়, সবাই বিএনপির। আমি ফরিদপুর বিএনপিকে এ অবস্থায় দেখতে চাই।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এসব সমাবেশে প্রথমবারের মতো একজন করে কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকরা রয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। জনগণের পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। সেখান থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আমরা যেভাবে কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সাড়া পাচ্ছি, আশা করি আগামী দিনে একদফার আন্দোলনেও তারা আমাদের পাশে থাকবে।’