বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

বাণিজ্যিকভাবে শুরু হচ্ছে ‘ভার্টিক্যাল ফার্মিং’

বাণিজ্যিকভাবে শুরু হচ্ছে ‘ভার্টিক্যাল ফার্মিং’

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে আবাদি জমি দিন দিন কমছে। বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। এমন সংকট উত্তরণে উন্নত বিশ্বের মতো দেশেও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হচ্ছে ‘ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ের’। উল্লম্ব কৃষি নামে পরিচিত এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হবে শেডের ভেতরেই। এ পদ্ধতিতে অল্প জমিতেই প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফসল হয়।

কাচঘেরা ঘরে ধাপে ধাপে বা কলাম আকারে ‘উল্লম্ব’ দিকে ফসল ফলানোর বাণিজ্যিক এই পদ্ধতি দেশে শুরু করতে যাচ্ছে ‘এসিআই এগ্রিবিজনেস’। নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে এসিআই। পদ্ধতিটির সম্ভাব্যতা যাচাইও হয়ে গেছে। শিগগিরই দেশে এ পদ্ধতির প্রদর্শনী শুরু হবে। কৃষিবিদরা বলছেন, ক্রমাগত চাষযোগ্য জমি কমে যাওয়ার এই সময়ে দেশে এ পদ্ধতির যাত্রা শুরু হওয়া খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ পদ্ধতি খুবই সম্ভাবনাময়।

সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল নেদারল্যান্ডস সফরে যায়। দেশটিতে ভার্টিক্যাল পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখে অনুপ্রাণিত হন দেশের ব্যবসায়ীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতেই এসিআই এগ্রিবিজনেস নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে।

কোনো একটি ভূমি বা জমি থেকে ওপরের দিকে কলাম আকারে একাধিক ধাপ তৈরি করে তাতে ফসল ফলানোই হচ্ছে উল্লম্ব পদ্ধতি। দেশে পিরামিড আকারে কলাম তৈরি করে ধাপে ধাপে ফসল চাষ করা যেতে পারে বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। তবে বিশ্বে অল্প জায়গায় স্বচ্ছ কাচঘেরা পুরো নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ভার্টিক্যাল ফার্মিং হয়ে থাকে।

এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী আমাদের সময়কে বলেন, ‘ভার্টিক্যাল অ্যাগ্রিকালচার বা ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ের মাধ্যমে এক হেক্টর জমিতে ১ হাজার টন ফসল উৎপাদন সম্ভব। দেশীয়ভাবে চাষাবাদ করলে প্রতি হেক্টরে মাত্র ২৪ থেকে ২৫ টন, শীতকালে ৬০ টন পর্যন্ত ফসল উৎপাদন হয়। এ জন্য শেড বা হাউস বানাতে হবে। গ্রিন হাউসের মতো পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, আর সেই ঘরটির ভেতেরই চাষাবাদ হবে। দেশে এখনো এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়নি।’

ড. এফএইচ আনসারী বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা নেদারল্যান্ডসে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি রাস্তার দুই ধারে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। পরে আমরা নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছি। আমরা ফিজিবিলিটি করে দেখছি, বাংলাদেশে এ পদ্ধতি প্রয়োগ সম্ভব। আমরা শিগগিরই আমাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে একটি প্রদর্শনী (চাষ) করব। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য শেড তৈরির কিছু যন্ত্রপাতি বাইরে থেকে আনব। কিছু জিনিস দেশেই মিলবে। প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বাইরে থেকে আনতে হবে। এ পদ্ধতিতে সবজি, ফুল ও কিছু ফলের চাষ করা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক লাগবে না, পেস্টিসাইড লাগবে না। সারাবছর চাষাবাদ করা যাবে। পরিমাণমতো সার ও বীজ হলেই চলবে। কৃষিমন্ত্রী এ পদ্ধতির প্রতি খুবই আগ্রহী। সরকার যদি কৃষক বা উদ্যোক্তাদের কিছু ভর্তুকি দেয়, তবে এ পদ্ধতি দেশে জনপ্রিয় হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ড. এফএইচ আনসারী জানান, প্রতি স্কয়ার মিটার শেড তৈরিতে সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো খরচ হবে। ৩ হেক্টর আবাদি জমি তৈরিতে কোটি টাকার মতো প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণ কৃষক আগ্রহ না দেখালেও উদ্যোক্তারা এ পদ্ধতির প্রতি বেশ আগ্রহী হবেন।

জানা গেছে, ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ে সূর্যের আলো ছাড়াই চাষাবাদ হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে লেটুস ও পাতাকপিসহ চাষ হচ্ছে কয়েক ধরনের সবজি। এ পদ্ধতিতে সালোকসংশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করা হয় বেগুনি রঙের এলইডি লাইট। একটি কক্ষে কয়েকটি শেড তৈরি করা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাটি থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত ১৪টি শেড তৈরি হয়ে থাকে।

বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর ৩৭ শতাংশ স্থলভাগ ব্যবহার করা হয় কৃষিকাজের জন্য। জলবায়ুর পরিবর্তন আবাদি জমির সহজলভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলছে প্রতিনিয়ত। সংস্থাটির ফুড প্রোগ্রামের মতে, আবাদি জমির এক-তৃতীয়াংশ কার্যকারিতা হারাচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877