প্রিয়জনের ফিরে আসার খুশিতে আনন্দে উদ্বেলিত কারও হাতে ফুল, কারও হাতে কেক, কারও হাতে ছোট্ট জাতীয় পতাকা। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আসা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের বরণ করে নিতে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এভাবেই ভিড় করেন পরিবার-স্বজন। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি-১) জেটিতে ভিড়ে নাবিকদের বহনকারী জাহাজটি। দীর্ঘ ৬৪ দিনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ঘটে অবসান।
সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে আসা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছেন আজ বিকাল ৪টায়। আগের দিন সোমবার সন্ধ্যায় কুতুবদিয়ায় নোঙর করে এমভি আবদুল্লাহ। সেখান থেকে নাবিকদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে লাইটার জাহাজ জাহান মনি-৩।
নাবিকদের অপেক্ষায় আগে থেকেই জেটিতে উপস্থিত ছিলেন কারও মা, কারও স্ত্রী-সন্তান, কারও ভাই-বোন। দূরে জাহাজ আসতে দেখেই নাবিকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে থাকেন তারা। জেটির কাছাকাছি আসতেই ডেক থেকে ২৩ নাবিক স্বজনদের হাত নেড়ে সাড়া দেন।
স্বজনদের সঙ্গে নাবিকদের স্বাগত জানাতে চট্টগ্রাম বন্দরে জেটিতে উপস্থিত হন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল। ২৩ নাবিক জেটিতে নেমে আসার পরই তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
মুক্ত নাবিকরা হচ্ছেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ, প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মোজাহেরুল ইসলাম, তৃতীয় কর্মকর্তা তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী রুকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ ও ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান।
জাহাজের অন্য নাবিকরা হলেন ইব্রাহিম খলিল , সাজ্জাদ হোসেন, আনওয়ারুল হক, আসিফ উর রহিম, জয় মাহমুদ, নাজমুল হক, আলী হোসেন, মো. শামসুদ্দিন, আইনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন শাকিল, সালেহ আহমেদ, শফিকুল ইসলাম ও মো. নুর উদ্দিন।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি করে নিয়ে যায় সোমালী জলদস্যুরা। মুক্তিপণ না দিলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় জলদস্যুরা। সেদিন থেকেই দেশে পরিবারের সদস্যরা ছিলেন উদ্বেগ- উৎকণ্ঠায়।
পরবর্তীতে মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পান নাবিকরা। জিম্মির ৩৩ দিন পর ১৩ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে যায়। তবে নাবিকরা তখনই দেশে না ফেরায় পরিবারের উদ্বেগ কমেনি। এ অবস্থাতেই দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। সেখান থেকে পণ্য খালাস করে আরেক বন্দর থেকে ফের পণ্য বোঝাই করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয় জাহাজটি।
দুবাই থেকে ৩০ এপ্রিল রওনা হয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে এমভি আব্দুল্লাহ। গত সোমবার সন্ধ্যায় কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে জাহাজটি। সেখান থেকে পুরনো নাবিকদের জায়গায় জাহাজে ওঠেন নতুন নাবিকদের ব্যাচ। জিম্মিদশা থেকে মুক্তরা ফিরে আসেন স্বজনদের কাছে।