স্বদেশ ডেস্ক:
বিদেশে দীর্ঘ হচ্ছে সিলেটের তরুণদের লাশের মিছিল। কেউ মারা যাচ্ছেন অবৈধপন্থায় ইউরোপ যাত্রার পথে। কেউ মারা যাচ্ছেন বিদেশের মাটিতে সন্ত্রাসী হামলা ও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে। গেল দুই বছরে সাগরে ডুবে, পুলিশের গুলিতে, সন্ত্রাসী হামলা ও দুর্ঘটনায় সিলেটের শতাধিক যুবক মারা গেছেন। সম্প্রতি তুরস্ক ও গ্রিস সীমান্তে ঠান্ডায় মারা গেছেন অভিবাসী প্রত্যাশী সিলেটের দুই যুবক। এর আগে গত এক মাসে মারা গেছেন আরও ১০ জন। গত মাসের শেষ দিকে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় যাওয়া বিয়ানীবাজারের খশির আবদুল্লাহপুর শাহজিপাড়ার আমিনুল ইসলাম নামে এক যুবক সে দেশের পুলিশের গুলিতে মারা যান। লিবিয়ার কারাগারে বিয়ানীবাজারের আরও ২৪ যুবক বন্দি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। গত ২ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও গ্রিস সীমান্তে অভিভাসনপ্রত্যাশী ১২ জন ঠান্ডায় মারা যান। এর মধ্যে ছিলেন সুনামগঞ্জের দুজন। একজন দিরাই উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের জনি সর্দার ও অপরজন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তুরস্ক হয়ে তারা গ্রিসে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একইভাবে তুরস্ক থেকে গ্রিস যাওয়ার পথে দুই সিলেটী যুবকের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- ওসমানীনগর উপজেলার মনোহর আলীর ছেলে আক্তার আহমেদ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার আসিদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান।
বিদেশে গিয়ে মারা যাওয়া যুবকদের পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশে যে যুবক কোনো কাজই করেনি, বিদেশ গিয়ে তাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। স্বজনদের মুখের দিকে চেয়ে তারা ফিরেও আসতে পারেন না। ফলে অনেকে হতাশায় ভোগেন। এ থেকে দুর্ঘটনাও ঘটছে। বর্ণবাদ ও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েও অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলসাইন্দ পীরেরচক গ্রামের বাসিন্দা জুবেল আহমদ। ৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার নর্দান কেপ প্রদেশের আফিংটন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সিলেট নগরীর কুশিঘাট এলাকার আলাওর রহমানের ছেলে আকবর হোসেন। গত বছরের ৫ মে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ সংলগ্ন আলবার্টনে আরমান মিয়া নামের এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ৩০ জানুয়ারি দুবাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের গণকিয়া গ্রামের ইসমাইল আলীর ছেলে আশরাফ আলী। দুবাই যাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়। গত বছরের ১৪ আগস্ট রাতে কুয়েতের আবদালি এলাকায় একটি কৃষি খামারের ‘লেবারশেডে’ আগুন লেগে সিলেটের তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ৩১ অক্টোবর রাতে সৌদির রিয়াদে বহুতল ভবন থেকে পড়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ণি গ্রামের মো. আলী হোসেন নামের এক শ্রমিক মারা যান। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের দাম্মামে লিফট ছিড়ে মারা যান গোয়াইনঘাট উপজেলার নবমখ গ্রামের যুবক মো. শাহীন খান। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডে সহকর্মীর ছুরিকাঘাতে খুন হন বিয়ানীবাজার উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের সেলিম উদ্দিন নামের এক যুবক।