বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

ফোরটি ফাইভ অ্যাঙ্গেলে গুলি ছোঁড়ার কথা স্বীকার দস্তগীরের

ফোরটি ফাইভ অ্যাঙ্গেলে গুলি ছোঁড়ার কথা স্বীকার দস্তগীরের

স্বদেশ ডেস্ক:

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে গত ১৯ জুলাই সিলেটের বন্দরবাজারে নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান আবু তুরাব নিহতের সময় ফোরটি ফাইভ অ্যাঙ্গেলে গুলি ছুঁড়েন এসএমপির তৎকালীন এডিসি সাদেক কাউসার দস্তগীর। তুরাব হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মুহাম্মদ মুরসালিন আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে নয়া দিগন্তকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, রিমান্ডে সাদেক কাউসার দস্তগীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে জানান, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনি এক কনস্টেবলের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফোরটি ফাইভ অ্যাঙ্গেলে গুলি ছুঁড়েন। তবে কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়েননি বলে দাবি করেন তিনি। ঘটনার দিন ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখালে গুলি ছোঁড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাদেক কাউসার।

সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলায় গ্রেফতার সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার কারাগারে পাঠিয়েছে পিবিআই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুরসালিন জানান, মঙ্গলবার দস্তগীরকে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত-১-এ হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক আবদুল মোমেন শুনানি শেষে সাদেক কাউসারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সিলেট পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুরসালিন জানান, রিমান্ডে সাংবাদিক তুরাব হত্যার বিষয়ে দস্তগীর দাবি করেছেন, ঘটনার দিন পুলিশের অনেকেই গুলি ছুঁড়েছেন। কিন্তু তুরাব কার গুলিতে মারা গেছেন, বিষয়টি তার জানা নেই।’

গত ১৯ জুলাই দুপুরে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। এ সময় সিলেটের বন্দরবাজারে বিএনপি আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে দায়িত্বরত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। পরে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সদ্য বিবাহিত তরুণ সাংবাদিক এটিএম তুরাব।

এর আগে তুরাব হত্যা মামলায় সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক পুলিশ কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহকে গ্রেফতার করা হয়। তাকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।

এরপর এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শেরপুর থেকে সাদেক কাউসার দস্তগীরকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে সিলেট আদালতে তোলা হয়। তখন তাকে আদালত ভবনে বিক্ষুব্ধ কয়েকজনকে লাথি-ঘুষি মারতে দেখা গেছে। আদালতে নেয়ার পর তুরাব হত্যা মামলায় সাদেক কাউসার দস্তগীরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

সাদেক কাউসার আন্দোলন চলাকালে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি শেরপুরের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার দিনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ১৯ জুলাই বেলা ২টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির মিছিলে পেছন থেকে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এ সময় সাদা পোশাকে থাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাউসার একজন কনস্টেবলের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে একের পর এক নিয়ে গুলি ছুঁড়ছেন। ওই সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর জখম সাংবাদিক তুরাব ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার দেহে ৯৮টি স্প্লিন্টার পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই সময়ে নিহত তুরাবের ভাই থানায় মামলা করতে গেলে তা নেয়নি পুলিশ।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত-১-এর বিচারক আবদুল মোমেনের আদালতে হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ (জাবুর)। মামলাটি কোতোয়ালি থানাকে রেকর্ড করতে নির্দেশ দেন আদালত।

ওই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীর, উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ঘটনার পর সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাউসার ও উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখকে সিলেট থেকে বদলি করা হয়। গত ৮ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে তুরাব হত্যা মামলার নথিপত্র কোতোয়ালি থানা পুলিশ পিআইবিকে বুঝিয়ে দেয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877