বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১১:১৬ অপরাহ্ন

পরিচয়ের মানুষগুলো আজ ‘অজ্ঞাত’ হয়ে গণকবরে

পরিচয়ের মানুষগুলো আজ ‘অজ্ঞাত’ হয়ে গণকবরে

স্বদেশ ডেস্ক:

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে অঙ্গার হওয়া ২৩ জন মানুষকে কোনোভাবে শনাক্ত করা যায়নি। স্বজনদেরও সম্ভব ছিল না তাদের ভাগ্যাহত আপনজনকে চিনে নেয়া। তাই উপকূলের এসব দুর্ভাগা মানুষ আজ ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ নিয়ে গণকবরে ঠাঁই নিয়েছেন।

তাদের কারো কবরের ওপর লেখা রয়েছে- ‘ঢাকা-বরগুনা নৌরুটের অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের সাধারণ ডায়েরি নম্বর- ১০৯২/২৬। পরিচয়- অজ্ঞাত।’

উপকূলবাসীর মধ্যে তারা সবাই এতোদিন ছিলেন পরিচয়ের মানুষ। আজ অ-পরিচয় নিয়ে বরগুনার পোটকাখালী কবরস্থানের চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তারা।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পোড়া লঞ্চের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের পুড়ে অঙ্গার হওয়া মৃতদেহ। পুড়ে বিকৃত হওয়া নিথর দেহগুলোকে চেনার কোন উপায় ছিল না। তাই তারা সবাই এখন ‘অজ্ঞাত পরিচয়’। এ পরিচয়েই পোটকাখালী কবরস্থানে শুয়ে আছেন এসব হতভাগ্য উপকূলবাসী।

বরগুনা জেলা প্রশাসন লঞ্চ-অগ্নিকাণ্ডে নিহত হওয়া ৩৭ জনের লাশ বুঝে নেয়। ১৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া বাকি ২৩ জনের লাশ অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন করা হয়।

এদের পরিচয় শনাক্ত করতে স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, যেহেতু ঘটনাটি ঝালকাঠির তাই একটু সময় লাগবে নমুনা সংগ্রহের কাজে। সর্বত্র অজ্ঞাতদের তথ্য দিতে ডিসি অফিসের কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগের আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে ৩০ জনের লাশ জানাজার জন্য নেয়া হয় বরগুনার সার্কিট হাউস মাঠে। জানাজা শেষে লাশগুলো আবারও স্বজনদের দেখানো হয়।

এ সময় ৮ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়। এর আগে ৬ জনের পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে এখনো নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে ছোটাছুটি করছেন অনেকে।

নিহতের স্বজনেরা বলছেন, এমন দুর্ঘটনায় আর যেন কারো মৃত্যু না হয় । এর মধ্যে একটি কফিনের গায়ে লেখা ‘মা ও মেয়ের লাশ’। আগুনে পুড়ে অঙ্গার মা ও মেয়ের লাশ দাফনও করা হয়েছে একই কবরে। এই কবরেও নামের বদলে পরিচয় দেয়া হয়েছে ‘অজ্ঞাত’। মা-মেয়ের নম্বর হচ্ছে মা ১০৯২/২৬ মেয়ে ১০৯২/৩৬।

সুমন নামে স্বজনহারা একজন বলেন, এখনো আমার দুই মেয়ে মেয়ে সুরাইয়া আক্তার মিম ও সুবনা আক্তার তানিসা, স্ত্রী তালসিমা ও আমার শ্যালক জনির ছেলে জুনায়েদ ইসলামকে খুঁজে পাইনি। তাই এই গণকবরস্থানে এসেছি এখানে প্রতিটি কবরেই লেখা রয়েছে ‘অজ্ঞাত’ কিন্তু নাম নেই। এখানেই মনে হয় আমার দুই মেয়ে স্ত্রী ও শ্যালকের ছেলে রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য।

তিনি আরো বলেন, বেঁচে থাকার আশা তো শেষ, এখন লাশ কয়টা পেলেই হয়। তবুও শান্তি পাব।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো: হাবিবুর রহমান বলেন, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে অঙ্গার হওয়া ২৩ জনকে অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন করা হয়েছে। বাকি ১৪ জনকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অজ্ঞাতদের পরিচয় জানাতে শুধুই নম্বর দেয়া হয়েছে। এখনো যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের পাওয়ার সব ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ তারা জীবিত বা মৃত থাকতে পারেন।

এছাড়া পরিবারের কাছে হস্তান্তর ১৪ জনকে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877