স্বদেশ ডেস্ক:
যুদ্ধাপরাধী বা ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নামকরণকৃত, নেতিবাচক নামের কারণে সমাজে প্রভাব পড়তে পারেÑ এ রকম কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
দুই বছর পর আবারও বেসরকারি স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য ১০ অক্টোবর থেকে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করবে সরকার। এক্ষেত্রে শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওড়-বাঁওড়, চরাঞ্চল, ছিটমহল, বস্তি এলাকা, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী (প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক, চা-বাগান শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি) এবং বিশেষায়িত, চারুকলা, বিকেএসপি ইত্যাদি সংস্থা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিলযোগ্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজের নামে খতিয়ানভুক্ত ও নামজারিকৃত নিজস্ব ভূমিতে অবকাঠামো এবং হালনাগদ একাডেমিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তবে যুদ্ধাপরাধী বা ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নামকরণকৃত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পাবে না। একইভাবে নেতিবাচক নামের কারণে সমাজে প্রভাব পড়তে পারেÑ এ রকম কোনো প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির আওতায় আসবে না। নাম পরিবর্তন করে গ্রহণযোগ্য নামকরণ করে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে হবে।
আবেদনের যোগ্যতা :
শিক্ষার্থীর সংখ্যা- কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যার ক্ষেত্রে ২০ নম্বর, কাম্য সংখ্যার পরবর্তী প্রতি ২০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য ৫ নম্বর, কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলে শূন্য, তবে সর্বোচ্চ ৩০ নম্বর। কাম্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যার ক্ষেত্রে ২০ নম্বর, কাম্য সংখ্যার পরবর্তী প্রতি ১৫ জনের জন্য ৫ নম্বর, কাম্য পরীক্ষার্থী না থাকলে শূন্য, তবে সর্বোচ্চ ৩০ নম্বর। পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার- কাম্য পাসের হার অর্জনের ক্ষেত্রে ২৫ নম্বর, কাম্য পাসের হার অর্জনের ক্ষেত্রে ২৫ নম্বর, কাম্য হারের পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য ৫ নম্বর, কাম্য পাসের হার না থাকলে শূন্য, তবে সর্বোচ্চ ৪০ নম্বর। মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করা হবে।
কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (ডিগ্রি কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাদশ, দ্বাদশ) এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সব বিভাগের ন্যূনতম শিক্ষার্থীর যোগফল কাম্য শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সর্বশেষ তিন বছরের স্ব স্ব স্তরের গড় শিক্ষার্থী, তিন বছরের গড় পরীক্ষার্থী (জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি পাস) এবং তিন বছরের গড় পাসের হার বিবেচনা করা হবে।
এমপিওসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওর প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ গেছে মনে করলে প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও কমিটির সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে ১৫ দিনের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর আপিল করতে পারবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটি আপিলকারীকে শুনানি নিয়ে পুনরায় কাগজপত্র যাচাই করে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করবে এবং প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।
প্রাথমিক তালিকা যাচাই করে সরকার এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে। এ চূড়ান্ত আদেশ অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এমপিওর অফিস আদেশ (জিও) জারি করবে। এর পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী এমপিও কোড প্রদান করবে।
এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে দীর্ঘ ৯ বছর পর ২ হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেছিল সরকার। এরও আগে ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এই এমপিওভুক্তির দাবি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করেছেন। এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা সরকার থেকে পেয়ে থাকেন।