স্বদেশ ডেস্ক: বিদিশা এরশাদের সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে তোলপাড় চলছে। গতকাল দুপুরে মাজার জিয়ারতে এসেছিলেন বিদিশা। একই সময় সিলেট জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর রোগমুক্তি কামনা করে দরগাহে মিলাদ করেছেন। পরে তারা বিদিশার দল গঠন ও সঙ্গে থাকা সিলেটের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ। সম্প্রতি তাকে ঘিরে জাতীয় পার্টিতে তুমুল আলোচনা । এই অবস্থায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল দুপুরে বিমানের একটি ফ্লাইটে বিদিশা সিলেটে আসেন। বিমানবন্দরে তাকে কয়েকজন নেতা স্বাগত জানান।
এরপর সেখান থেকে গাড়িযোগে চলে আসেন ওলিকুল শিরোমনি হযরত শাহ্জালাল (রহ.)-এর মাজারে। সেখানে মহিলা এবাদত খানায় তিনি কিছু সময় অবস্থান নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় ও মোনাজাত করেন। পরে বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জাতীয় পার্টির পুনর্গঠনের জন্য তার এই সিলেট সফর দাবি করে বিদিশা এরশাদ বলেন- ‘জাতীয় পার্টির অবস্থা এখন ভালো নেই। সরকারের সঙ্গে ভালো সমন্বয়ও নেই। সমন্বয় থাকলে সিলেট-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক আরও ভোট পেতেন এবং এরশাদের লাঙ্গল মার্কা জয় লাভ করতো। আমাকে ঘিরে কোনো উপদল সৃষ্টি হবে না। এরশাদের ছেলে এরিকের ঘোষণা অনুযায়ী আমি মূল জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান।’ তিনি বলেন- ‘সিলেটের মানুষ যেভাবে আমাকে রিসিপশন দিয়েছেন, গ্রহণ করেছেন তাতে আমি ভীষণ আবেগাপ্লুত। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিলেটকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি মনে করতেন। আমিও যাতে এমনটা বলার জায়গায় যেতে পারি সে চেষ্টাই করছি।’ এদিকে- সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর বিদিশা মাজারে শিরনি বিতরণ করেন। এরপর হোটেলে বিশ্রাম করেন এবং হোটেলে অবস্থানকালে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাতে বিমানের আরেকটি ফ্লাইনে তিনি ঢাকা চলে গেছেন। সফরে বিদিশার সঙ্গে ছিলেন এরিক এরশাদ ঘোষিত দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে- বিদিশা যখন মাজারে অবস্থান করছিলেন তখন সিলেট জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মাজার অভ্যন্তরে মিলাদ মাহফিলে ছিলেন। করোনা আক্রান্ত দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর রোগমুক্তি কামনা করে তারা দোয়া করেন। পরে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিলেট জাপার নেতারা। জেলার সদস্য সচিব উসমান আলী জানিয়েছেন- ‘আমাদের মহাসচিব সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছুদিন সিলেটে অবস্থান করেছেন। ফিরে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়েছেন। তার রোগমুক্তি কামনা করে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন ছিল। এতে জাতীয় পার্টির সকলস্তরের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছেন।’ তিনি বলেন- ‘বিদিশা জাতিকে কিছুই দিতে পারবে না। জাতীয় পার্টির জন্য ওই মহিলা অভিশাপ। স্যারকে দেখাশোনা করার সময় ব্ল্যাকমেইল করেছিলেন ওই মহিলা। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছেন। আগামীতেও থাকবেন।’ সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কুনু মিয়া জানিয়েছেন- ‘জাতীয় পার্টি সিলেটসহ সারা দেশে ঐক্যবদ্ধ। বিদিশা মধ্যখান থেকে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির পাঁয়তারা করছেন। আমরা সিলেট থেকে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে আবেদন জানাবো- বিষয়টি শক্তহাতে দমন করার জন্য। কেউ যেন নতুন করে দলের ভেতরে ভাঙন সৃষ্টি না করতে পারেন সেজন্য সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে এক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।’
মিলাদ ও দোয়া মাহফিল: জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর রোগমুক্তি কামনা করে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বাদ জোহর হযরত শাহ্জালাল (রহ.) মাজার মসজিদে এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন- জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কুনু মিয়া, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মো. উসমান আলী (চেয়ারম্যান), যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির চৌধুরী, মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আহমদ আলী, জেলা জাতীয় যুব সংহতি নেতা মর্তুজা আহমদ চৌধুরী, সদস্য আলী হোসেন সরকার, মো. দৌলা মিয়া, আতিক মিয়া, হোসেন আহমদ, জাতীয় যুব সংহতি সিলেট জেলা সহ-সভাপতি শাহ্ নুরুজ্জামান, ফয়ছল আহমদ, সেলিম আহমদ, জাতীয় যুব সংহতি সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক আশিক মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, এসএম শাম্মী, সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল হাসান, দেলওয়ার হোসেন, টিপু আহমদ, মো. আলী হোসেন, আলমাস উদ্দিন, আব্দুল কাদির, রাসেল আহমদ, আনোয়ার হোসেন, মো. মারুফ আলী প্রমুখ।