মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ অপরাহ্ন

নতুন শঙ্কায় পোশাক খাত

নতুন শঙ্কায় পোশাক খাত

স্বদেশ ডেস্ক:

বৈশ্বিক করোনার থাবায় একের পর এক বিপর্যস্ত হচ্ছে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প। বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার বাতিল ও স্থগিত শুরু হয়। এবার নতুন করে যোগ হয়েছে পোশাক তৈরির কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি। অন্যদিকে আগের দামে পোশাক কিনতে চান না ক্রেতারা। সব মিলিয়ে নতুন শঙ্কায় পড়েছে দেশের পোশাক খাত। এমনই বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের পোশাক খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে টিকে থাকাই কঠিন। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। যারা এখনো কারখানার চাকা চালু রেখেছেন তারা অনেক কষ্টে আছেন। আগের তুলনায় অর্ডার কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি নতুন করে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল সুতা, রং, কেমিক্যালসহ সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে দাম বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে শতভাগ। এতে নতুন করে বিপদে পড়ছেন তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। পোশাকের উৎপাদন খরচ বাড়লেও উদ্যোক্তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করতে পারছেন না। বরং আগের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দাম কম বলছেন।

জানা গেছে, মাসখানেক আগে যেখানে প্রতি পাউন্ড তুলা গড়ে ৭৫ সেন্টে বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে তা বেড়ে ৯০ সেন্টের কাছাকাছি পৌঁছেছে। অন্যদিকে অর্গানিক তুলার দাম ১ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তাতে দেশে সাধারণ সুতার দাম কেজিতে ২৫-৩০ সেন্ট পর্যন্ত বেড়ে গেছে। অর্গানিক সুতার দাম বেড়েছে ৬০-৮০ সেন্ট পর্যন্ত।

নারায়ণগঞ্জের এমবি নিট ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ করে সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রয় আদেশ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি। আগের নেওয়া কিছু ক্রয় আদেশে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ক্রেতাদের সুতার বাড়তি দামের কথা জানালে তারা বলছেন এ ব্যাপারে তাদের কিছু করার নেই।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা অ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমই-এর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান আমাদের সময়কে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। এখন আমরা বড় বিপদের মধ্যে পড়েছি। আগের দাম হিসেবে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার নেওয়া হয়েছে। ফলে এখানে লোকসান হচ্ছে।

অন্যদিকে ক্রেতারা আগের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দাম কম বলছেন। তিনি বলেন, করোনার আগে যে জ্যাকেট বিক্রি হতো ৭ ডলার ৭৭ সেন্টে। বর্তমানে সেই জ্যাকেটের দাম বলা হচ্ছে ৭ ডলার ১০ সেন্টে। অন্যদিকে ৯৮ ডলারের কেমিক্যালের দাম এখন ১৯৮ ডলারে ঠেকেছে। অর্গানিক সুতা ২ ডলার ৮০ সেন্টে হলেও এখন কিনতে হচ্ছে ৪ ডলার ৯০ সেন্টে। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নতুন করে বড় বিপদের মধ্যে পড়েছে পোশাক খাত। এভাবে চলতে থাকলে জানিনা উদ্যোক্তাদের পরিস্থিতি কোথায় যায়।

এদিকে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন- ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবার তুলার উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া চীনারা প্রচুর পরিমাণে তুলা ও সুতা কিনে মজুদ করেছে। সে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম কিছুটা বাড়তি। সুতা আমদানিতে কনটেইনার পরিবহনের ব্যয়ও আগের চেয়ে বেশি। এ কারণেই সুতার দাম বেড়েছে।

বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে ৮২ লাখ বেল (৪৮০ পাউন্ডে এক বেল) তুলা আমদানি হয়। তা ২০১৯ সালে কমে ৭১ লাখ বেলে দাঁড়ায়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ বা ২৬ লাখ ২৭ হাজার বেল তুলা আফ্রিকা থেকে এসেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ শতাংশ বা ১৮ লাখ ৪৬ হাজার বেল তুলা ভারত থেকে আমদানি করেছেন বস্ত্রকলের মালিকরা। কমনওয়েলথভুক্ত দেশ অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ থেকে বাকি ৩৭ শতাংশ তুলা এসেছে।

এদিকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ডিসেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানিতে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত থেকে পতন হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যার কারণে ২০২০ সালের বার্ষিক রপ্তানিতে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ দৃষ্টান্তহীন পতন ঘটেছে।

২০২০-এর জুনের পর থেকে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। উল্লিখিত মাসে নিটওয়্যার রপ্তানি ঋণাত্মক ০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি নিয়ে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের কারণে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877