স্বদেশ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে হামলায় উসকানিদাতা হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিয়ম অনুযায়ী অভিশংসনের প্রস্তাবটি এখন উচ্চকক্ষ বা সিনেটে যাবে। কিন্তু তা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো- ‘সময়’। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র চার দিন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো। যদিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হলেও মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাধা নেই।
ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ত্বরিত তৎপরতায় অল্প সময়ের মধ্যেই নিম্নকক্ষে অভিশংসনের মতো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সিনেটের বিষয়-আশয় আলাদা। সেখানে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান প্রভাব সমানে-সমান। এর পরও কথা রয়েছে- সিনেটে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস হতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ অন্তত ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিতে হবে, যা এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সিনেটে অভিশংসনের প্রস্তাবের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককলেন ছুটির দোহাই দেখিয়ে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ১৯ জানুয়ারি ছুটি শেষ হলে তার পর সিনেটের অধিবেশন বসবে। এ ছাড়া সিনেটে এ ধরনের প্রস্তাব কখনই একদিনে সম্পন্ন হয় না। এমন বিষয়ে সাধারণত কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। অর্থাৎ ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদের মধ্যে ট্রাম্পকে পদচ্যুত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ক্ষমতার মেয়াদের পরও একজন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের কথায়, অভিশংসন শুধু কর্মকর্তাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই করা হয় না। একই সঙ্গে তাদের ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট পদ বা সরকারি কোনো পদে অযোগ্য ঘোষণার জন্যও করা হয়।
সিনেটে যদি ট্রাম্পের বিচার অনুষ্ঠিত হয়, সে ক্ষেত্রে তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটরের সমর্থন প্রয়োজন হবে। প্রতিনিধি পরিষদের ভোটে দেখা গেছে, ১০ রিপাবলিকান সদস্য ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন সিনেটরও এমন আভাস দিয়েছেন। এর মধ্যে আলাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর লিসা মারকোস্কি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যেই বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দেবেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাককলেন যদি এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতেন, তা হলে হয়তো অনেক রিপাবলিকান সিনেটরই মুখ খুলতেন। ম্যাককলেন ট্রাম্পের প্রতি বিরক্ত। নির্বাচন কারচুপি নিয়ে ট্রাম্পের ভুয়া অভিযোগের সমালোচনা করেছেন তিনি। কিন্তু তাই বলে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে তিনি ভোট দেবেন, সেটা বলা মুশকিল।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য অন্য একটি বিষয় কাজ করতে পারে। ক্ষমতাসীন দলটির একটি অংশ ভাবছে, ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের ইমেজ নষ্ট করেছেন, তার সাজা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দল বিশুদ্ধ হতে পারে। এ নিয়ে দ্বিধা রয়েছে। ট্রাম্পের আমলের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিভক্ত হয়ে পড়েছে, অদূর ভবিষ্যতে তা আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের পদচ্যুতি না হলেও ক্ষমতার শেষদিনগুলো তিক্ত হয়ে থাকল। আর দশজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো গণতান্ত্রিক আচরণ তো করলেনই না, উপরন্তু দাঙ্গা-হাঙ্গামায় উসকানিদাতা হিসেবে অভিযুক্ত হলেন। যদিও ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। অভিশংসনের দিন প্রকাশিত ভিডিওবার্তায় ট্রাম্প ক্যাপিটলে হামলাকারীদের বিচারও দাবি করেছেন। কিন্তু এগুলো যে নির্জলা মিথ্যাচার, এসব কথা তার দলের নেতা-সমর্থকারই বলছেন। কাজেই ট্রাম্প নিজের দলের ভেতরও নন্দিত না হয়ে নিন্দিতই হলেন। আর এই নিন্দার ভার কাঁধে নিয়েই তাকে বিদায় নিতে হচ্ছে।