স্বদেশ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বুধবার অভিশংসিত করেছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে দু’বার অভিশংসন প্রস্তাব আনা হলো। ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় তিনি ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতায় উস্কানি’ দেয়ার দায়ে বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন তিনি। এরপর কি ঘটবে সেদিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে রিপোর্ট করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অভিশংসন প্রক্রিয়া কি শেষ?
না। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব এনে তাকে অভিশংসিত করেছে। এখন এই প্রস্তাব পাঠিয়ে দেয়া হবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে।
সিনেটে ট্রায়াল কখন শুরু হবে?
কালবিলম্ব না করে অভিশংসন প্রস্তাবের ট্রায়াল শুরুর জন্য ডেমোক্রেটদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাকলেন। তিনি বলেছেন, ছুটি শেষে সিনেট অধিবেশন বসবে ১৯ শে জানুয়ারি। তার আগে এই ট্রায়াল শুরু করা যাবে না। এর অর্থ হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০ শে জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়ার পর এই ট্রায়াল চলতে থাকবে সিনেটে। তবে সিনেটে এই ট্রায়াল শুরু হওয়ার আগে অবশ্যই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সিনেটের কাছে হস্তান্তর করতে হবে প্রতিনিধি পরিষদকে।
সিনেট ট্রায়ালে ট্রাম্প কি ব্যবস্থা নেবেন?
প্রতিনিধি পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে একটিমাত্র আর্টিকেলের ওপর ট্রাম্পকে অভিশংসন অনুমোদন দিয়েছে। সেটা হলো ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতায় উস্কানি’ দেয়া। ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা সৃষ্টির আগে ট্রাম্প তার হাজারো সমর্থকদের উদ্দেশে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, সেদিকে জোর দেয়া হয়েছে এতে। তবে ট্রায়ালে ট্রাম্প এটা বলতে পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধীনে মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত আছে। তার অধীনে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি সমর্থকদের ‘ফাইট’ করার আহ্বান জানালেও এর আক্ষরিক অর্থ সহিংসতায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান নয়। বুধবার ট্রাম্প একটি ভিডিওটেপ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধি পরিষদে ভোটের পর। এতে তিনি গত সপ্তাহের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা এবং ভাঙচুরের কোনো স্থান নেই। আমাদের আন্দোলনেও এর কোনো স্থান নেই।
তাহলে কি একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করা যায়?
হ্যাঁ। এ বিষয়ে বিজ্ঞজনরা মনে করেন যে, ‘লেট ইমপিচমেন্ট’ সংবিধানসম্মত। অর্থাৎ একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া চালানো যেতে পারে। এসব পণ্ডিতজন উল্লেখ করেন, অভিশংসন শুধু ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয় না। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট পদে বা সরকারি পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এর অর্থ হলো ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করলেও তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর উপায় আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা হয়েছে, কেউ একজন অভিযুক্ত হয়ে শাস্তি পেলে তিনি সম্মানজনক কোনো পদ ধারণ ও তা উপভোগ করার ক্ষেত্রে অযোগ্য হয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা ও লাভজনক পদ থেকেও তিনি অযোগ্য হয়ে যান। এখন সিনেট প্রক্রিয়ায় ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করতে হাতেগোনা কয়েকজন সিনেটরের প্রয়োজন ডেমোক্রেটদের। এমন ভোট হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অভিযুক্ত হওয়ার পর। তবে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করতে তাকে অভিযুক্ত হতে হয় কিনা তা স্পষ্ট নয়।
এই প্রক্রিয়া কতদিন স্থায়ী হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কিভাবে অভিশংসিত করতে হবে এ বিষয়ে সিনেটের নিজস্ব আইন আছে। বর্তমান আইনের অধীনে একটি ট্রায়াল অল্প দু’চার দিনের মধ্যে হতে হয়।