স্বদেশ ডেস্ক:
অগ্রিম ঘরভাড়া দিতে পারেননি কাঠমিস্ত্রি দম্পতি ইমদাদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তামান্না। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ছয় মাসের শিশুকন্যাসহ স্ত্রী আর কন্যাকে ঘরে পাঁচদিন তালাবদ্ধ করে রাখেন বাড়িওয়ালা মো. নওশের। তালাবদ্ধ ঘরে বালতির পানিতে ডুবে মারা যায় ওই দম্পতির শিশুকন্যা আজিজা তাসমিয়া। এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে খুলনা মহানগরীর হরিণটানা রিয়াবাজার এলাকায়।
গতকাল শিশুটির বাবা-মা বাড়িওয়ালা মো. নওশেরকে দায়ী করে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা গ্রহণ না করে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। পরে তারা আদালতে এসে আইনজীবীদের কাছে অভিযোগ দেন। ঘটনার পর থেকে বাড়িওয়ালা নওশের পলাতক রয়েছেন। স্থানীয়রা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বাড়িওয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
জানা যায়, ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে কাঠের ডিজাইন মিস্ত্রি ইমদাদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তামান্না মাসে চার হাজার টাকার চুক্তিতে রিয়াবাজার এলাকায় একতলা বাড়ির দুটি কক্ষ ভাড়া নেন। কিন্তু জানুয়ারি মাসের অগ্রিম ভাড়া দিতে না পারায় ৬ জানুয়ারি থেকে ঘরে শিশুসন্তানসহ তামান্নাকে তালাবদ্ধ করে রাখেন নওশের। এ সময় তামান্নার স্বামী চট্টগ্রামের মোংলা ঝিউধরা এলাকায় কাঠের কাজ করছিলেন।
ইমদাদুল ইসলাম বলেন, সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও সন্তানকে জীবন দিয়ে ভালোবাসতাম। কিন্তু বাড়িওয়ালার নিমর্মতায় আজ সেই সন্তানকে হারাতে হলো। তামান্না ইসলাম জানান, তালাবদ্ধ অবস্থায় গত ১১ জানুয়ারি দুপুরে শিশুটি হঠাৎ খেলতে গিয়ে বালতির পানির মধ্যে উল্টে যায়। ঘরে এসে তিনি শিশুটিকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেও বাইরে থেকে ঘর তালাবদ্ধ থাকায় চিকিৎসকের কাছে নিতে পারেননি।
তামান্নার আকুতি, আমার মতো এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। আর কোনো পাষ- বাড়িওয়ালা যেন এভাবে অন্যায় করতে না পারে। এ জন্য তিনি বাড়িওয়ালার বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় জলমা ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম লিটন জানান, শিশুটির মা জানালা দিয়ে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন তালা ভেঙে তাদের উদ্ধার করেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, অসহায় বাবা-মা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগ করা হবে।