স্বদেশ ডেস্ক: ৪০ থেকে ৫০ জনের ডাকাত দল। দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াত ডাকাতির কাজে। লুটে নিতো মানুষের সর্বস্ব। কিন্তু শুধু ডাকাতিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না তাদের কাজ। নিয়মিত মাসোহারা নিতেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীক গোষ্ঠীর কাছ থেকে। না দিলে প্রজেক্টে হানা দিয়ে ডাকাতি করত গুরুত্বপূর্ণ মালামাল।
তবে ডাকাত দলের শেষ রক্ষা হয়নি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিম ডাকাত চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত সাত সদস্য দুই দিনের রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে এসব তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর আদাবরের বেরিবাঁধ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি জানায়, এই ডাকাত দলেল লিডার তিনজন। এরা কখনো মনির গ্রুপ, কখনো হাসমত গ্রুপ আবার কখনো বারেক গ্রুপ নামে পরিচিত। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছে এই চক্রটি। এজন্য এই দলের কয়েকজন সদস্য বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আবার পরে জামিনে বের হয়েছেন। এদের নাামে বিভিন্ন থানায় রয়েছে অস্ত্র ও ডাকাতি মামলা। শুরুতে এরা মানুষের বাড়িঘরে ডাকাতি করলেও গতকয়েক মাস ধরে ডাকাতির অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করে আসছিলেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজারের বড় বড় ব্যাটারি ডাকাতি করতো তারা। পরে আবার ওই ড্রেজারের মালিককে ব্যাটারিগুলো ফিরিয়েও দিতো।
কিন্তু এরজন্য তাদের মাসিক একটা চাঁদা বা মাশোয়ারা দিতে হতো। প্রত্যেকটি ড্রেজার থেকে প্রায় ২০ হাজার করে মাশোয়ারা উঠাতো এই ডাকাত দলের সদস্যরা। সর্বশেষ এমনই কায়দায় রাজধানীর আদাবরের বেরিবাঁধে বালু উত্তোলনের ড্রেজারের ব্যাটারি ডাকাতি করে তারা। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ডাকাত দলের মূল হোতা মনিরুজ্জামান (৩৩), হাসমত ব্যাপারী (৩৫) ও বারেক হালদার (৬৫)সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি, কয়েকটি দা ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গত ১২ জুন শরীয়তপুরের জাজিরা থানার লক্ষীকান্দিপুর গ্রামে এক বাড়িতে ডাকাতি করে দলটি। এসময় বাড়ির এক সদস্যকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দেড় লাখ টাকা ও সোনা-গয়না নিয়ে যায় ডাকাত দল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এ সংক্রান্তে গ্রেপ্তারকৃত এবং পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে আদাবর থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। ডাকাত দলের সদস্যরা রাজধানীর বেরিবাঁধ এলাকায় সুনিবির হাউজিং সোসাইটিতে ভাড়া থাকতেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন ইউনিটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজমুল হক আমাদের সময়কে বলেন, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছে। তারা ঢাকার আশে পাশের বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে ডাকাতি করতো। একই ইউনিটের ডিসি মীর মোদদাছছের হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত দলের সদস্যরা আরো বেশ কয়েকজনের নাম বলেছে। তাদের গ্রেপ্তারের কাজ চলছে।