বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেশ

নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেশ

স্বদেশ ডেস্ক;

স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে এখন রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের সব মাপকাঠিতেই প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান থেকে। অর্থনৈতিক শুধু নয়, সামাজিক সূচকগুলোতেও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

১৯৭২ সালে দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ১২৯ ডলার। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার। এ ৪৯ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬ গুণ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে পাকিস্তানে বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১১৩০ ডলার। পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মাথাপিছু আয় এখন আমাদের।

১৯৭১-৭২ অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। দেশটিতে -১২.৬ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও ১৯৭১-৭২ অর্থবছরেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয় ২.৭৫ শতাংশ। বর্তমানে করোনাকালেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। এই অর্থবছরে ০.৪ শতাংশ কমেছে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ রেমিট্যান্সের পরিমাণ স্বাধীনতার সময় ছিল মাত্র ৮০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের আকার ২ হাজার কোটি ডলার হবে বলে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ক্রমাগতভাবে বাড়ছেই। গত নভেম্বর মাসেই এসেছে ২০৭ কোটি ডলার। স্বাধীনতার পর দেশে রিজার্ভে বলতে গেলে কোনো ডলারেই ছিল না। সর্বশেষ তথ্যানুসারে বাংলাদেশে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার রিজার্ভ রয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানে রয়েছে মাত্র ২ হাজার ৮০ কোটি ডলার। দেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৪৪টি। পাকিস্তানে রয়েছে ২২টি ব্যাংক।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক স্থিরতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ থাকলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভিত্তিমূল্য বিভিন্ন সময় ধরা হয়েছে। যদি ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর ভিত্তিমূল্য ধরা হতো তা হলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বৃদ্ধি পেত।

স্বাধীনতার বছরে দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল প্রায় ৮৮ শতাংশ জনগণ। সেখানে করোনার পরিস্থিতির পরও বর্তমানে দেশের এই সংখ্যা হয়েছে ২৯.৫ শতাংশ। স্বাধীনতার পর আমাদের রাজস্ব বাজেটের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের মোট বাজেটের পরিমাণ ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৪৯ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে ৭২২ গুণ। উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) পরিমাণ তখন ছিল মাত্র ৫০১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের সার্বিক উন্নতির ক্ষেত্রে এখন আমাদের উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্য দেশের তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতিতে আমাদের স্থিতিশীলতা সন্তোষজনক। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাচ্ছে। বিজয়ের মাত্র পাঁচ দশকেই বাংলাদেশ অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বিস্ময়করভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। এই দুর্নীতি রোধ করতে হবে। পাশাপাশি সর্বজনীন সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। এই দুটি বিষয় সফলভাবে করতে পারলে বিশ্বে সব ক্ষেত্রে রোল মডেল হবে বাংলাদেশ।

এদিকে শুধু আর্থিক উন্নয়ন নয়; বরং সামাজিক উন্নয়নেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রাপ্তির হিসাবে বাংলাদেশ বেশি এগিয়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রতি হাজারে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। পাকিস্তানে ৫৯ জন। একইভাবে বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ শিশু প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব শেষ করছে। পাকিস্তানে ৭২ শতাংশ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করছে। আয়ুষ্কালের দিক থেকেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর, যা পাকিস্তানে ৬৭ বছর।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877