স্বদেশ ডেস্ক:
মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আগামী মঙ্গলবার থেকে আন্তঃলেনদেন সুবিধা চালু হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যেও আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এ দুটি সেবা চালু হলে গ্রাহকরা সহজেই ব্যাংক থেকে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এবং এমএফএস প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় আগামী মার্চের মধ্যে সব ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে আন্তঃলেনদেন চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়। জানা গেছে, শুরুতে এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই আন্তঃলেনদেন সেবায় যুক্ত হবে। বিকাশ, ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইউক্যাশ ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ইসলামিক ওয়ালেট থেকে গ্রাহকেরা একে অপরের মধ্যে লেনদেন করতে পারবেন। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক চাইলে তার বিকাশ হিসাব থেকে সহজেই এমক্যাশে টাকা পাঠাতে পারবেন। বর্তমানে একটি এমএফএস থেকে অন্য এমএফএসে টাকা
স্থানান্তরের কোনো সুযোগ নেই। এমএফএসের নিজেদের মধ্যে লেনদেনের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, আল-আরাফাহ্? ইসলামী ও পূবালী ব্যাংক থেকে এমএফএস প্রতিষ্ঠানে টাকা লেনদেন করা যাবে। অর্থাৎ, এ চার ব্যাংকের কোনো গ্রাহক চাইলে তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে আপাতত বিকাশসহ চারটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের হিসাবে টাকা পাঠাতে পারবেন। একইভাবে এমএফএস হিসাব থেকে ওই চার ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠানো যাবে। আপাতত চারটি ব্যাংক ও চারটি এমএফএস প্রতিষ্ঠান এই সেবায় যুক্ত হলেও অন্যদের ৩১ মার্চের মধ্যে আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটাও বলছে, এ সেবার জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো মাশুল নেওয়া যাবে না। তবে ব্যাংক ও এমএফএসগুলো কীভাবে মাশুল ভাগাভাগি করবে, সেটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশের (এনপিএসবি) মাধ্যমে নতুন এ সেবা চালু করা হচ্ছে।
একইভাবে ব্যাংক হিসাব হতে এমএফএস হিসাবে এবং এমএফএস হিসাব থেকে ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের উভয় ক্ষেত্রেই এমএফএস প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে লেনদেন করা অর্থের দশমিক ৪৫ শতাংশ মাশুল প্রদান করবে। অর্থাৎ পূবালী ব্যাংক থেকে বিকাশে ১ হাজার টাকা জমা হলে পূবালী ব্যাংককে ৪ টাকা ৫০ পয়সা দেবে বিকাশ। বিকাশ থেকে পূবালী ব্যাংকে অর্থ গেলেও একই হারে মাশুল ভাগাভাগি করতে হবে বিকাশকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এ লেনদেনের জন্য গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যমান লেনদেন মাশুলের অতিরিক্ত কোনো মাশুল নেওয়া যাবে না। বর্তমানে এমএফএস থেকে ব্যাংকে টাকা জমায় প্রতি হাজারে ২০ টাকা মাশুল কাটা হয়। তবে ব্যাংক থেকে এমএফএসে টাকা নিতে কোনো মাশুল লাগে না।
বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ, এমক্যাশ, শিওরক্যাশসহ দেশে ১৬টি প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। এমএফএস প্রতিষ্ঠান রকেটের মালিকানায় থাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংক জানিয়েছে, সফটওয়্যার হালনাগাদের কাজ চলায় আন্তঃলেনদেনে যুক্ত হতে বিলম্ব হবে। আগামী বছরের শুরুতে এ সেবায় যুক্ত হবে রকেট।
এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে এমএফএস প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা অনেক বেড়ে গেছে। এখন ঘরে বসেই এসব সেবার হিসাব খোলা যাচ্ছে। টাকাও আনা যাচ্ছে ব্যাংক হিসাব থেকে। আর কেনাকাটা, পরিষেবা বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন সুবিধা মিলছে ঘরে বসেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্ট শেষে এমএফএসের প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক ৯ কোটি ২৯ লাখে উঠেছে, আর এজেন্ট ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। আগস্টে লেনদেন হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা। আগস্টে এমএফএসের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০৪ কোটি টাকা প্রবাসী আয় বিতরণ হয়েছে, বেতন-ভাতা পরিশোধ হয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। কেনাকাটা হয়েছে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা। গ্যাস-বিদ্যুতের মতো পরিষেবা বিল পরিশোধ হয়েছে ৯০৮ কোটি টাকা।
এখন এমএফএসের মাধ্যমে সহজেই গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট বিল, স্কুল-কলেজের বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে। আবার বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান এবং সিনেমা দেখার টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইন ও অফলাইনে কেনাকাটা করা যাচ্ছে, আবার মোবাইল রিচার্জ সুবিধাও আছে। এ ছাড়া অন্যের হিসাবে টাকা পাঠানো, অর্থ উত্তোলনের সুবিধা তো রয়েছে।