শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী গাজানীতির প্রতিবাদে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায্য ও স্থায়ী সমাধান চায় চীন বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ১৫ সদস্যের দলে যাদের রাখলেন ওয়াকার
তরুণীকে ধর্ষণের পর গাড়ি আটকে রেখেছিলেন কেন, জানালেন ৩ আাসামি

তরুণীকে ধর্ষণের পর গাড়ি আটকে রেখেছিলেন কেন, জানালেন ৩ আাসামি

স্বদেশ ডেস্ক:

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে প্রাইভেটকারের মধ্যে চার দফা ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে গাড়িটি আটকে রেখে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করতে চেয়েছিলেন আসামিরা। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে আসছে জেনে পালিয়ে যান তারা। গতকাল শুক্রবার রাতে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানিয়েছেন আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলাম।

তদন্ত ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হলে গতকাল বেলা সোয়া ৩টার দিকে সাইফুর, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলামকে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তিনজন পর্যায়ক্রমে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

সূত্র জানায়, প্রথমে জবানবন্দি দেন মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর প্রধান আসামি সাইফুর রহমান জবানবন্দি দেন। এই দুজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক (এমএম–১) মো. জিয়াদুর রহমান।

এরপর রাত আটটার দিকে ৫ নম্বর আসামি রবিউল ইসলামকে আদালতে নেওয়া হয়। তিনি ধর্ষণে সহায়তা করেছেন বলে স্বীকার করেন। তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান। ঘটনা সম্পর্কে সাইফুর ও অর্জুনের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে রবিউলের বর্ণনার মিল রয়েছে। জবানবন্দি শেষে রাত পৌনে ১১টায় তিন আসামিকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়।

রাতে যোগাযোগ করলে মহানগর সিলেট পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুধু এটুকু জানি। আসামিরা কী বলেছেন, সে বিষয়ে কিছু জানি না।’

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিকেল পাঁচটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা জবানবন্দি দেন সাইফুর। এরপর অর্জুন জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে সাইফুর বলেছেন, তরুণীকে আগে থেকে চিনতেন তিনি। তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককে চিনতেন না। ওই যুবককে স্বামী বলে পরিচয় দেন তরুণী।

সাইফুর বলেন, তারা তরুণীর স্বামীর কাছে টাকাপয়সা দাবি করেন। ধর্ষণের পর অন্তত এক থেকে দেড় ঘণ্টা আসামিরা ছাত্রাবাসে অবস্থান করেন। ছাত্রাবাসে পুলিশ প্রবেশ করার আগেই খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যান। তার আগে মুঠোফোনে তাদের সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিষয়টি জানান।

জবানবন্দিতে এই আসামি আরও বলেন, প্রাইভেটকারটি টিলাগড় মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখান থেকে তারেক কারটি চালিয়ে ছাত্রাবাসে নিয়ে আসেন। এ সময় সাইফুর ও অর্জুন গাড়িতে ছিলেন। পরে মোটরসাইকেল চালিয়ে শাহ রনি তাদের সঙ্গে যোগ দেন। গাড়িতে তারা তরুণীকে নিয়ে নানা রকম খিস্তি করেন। গাড়িটি নিয়ে তারা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ১০৫ নম্বর কক্ষের সামনে আসেন। স্বামীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সেখানেই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। ১০৫ নম্বর কক্ষটি মাহফুজুর রহমানের (এজাহারে ৬ নম্বর আসামি) নামে বরাদ্দ থাকলেও কক্ষটি ব্যবহার করতেন সাইফুর। কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া পাইপগানসহ অস্ত্রগুলো তার ছিল বলে জবানবন্দিতে বলেছেন।

সাইফুর ও অর্জুনের দেওয়া জবানবন্দির অনেক তথ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে ঘটনার পর তরুণীর স্বামীর দেওয়া ঘটনার বর্ণনাও। গত ২৬ সেপ্টেম্বর তরুণীর স্বামী বলেছিলেন, টিলাগড় মোড়ে তারা স্বামী-স্ত্রী গাড়িতে বসে খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক তাদের জিম্মি করে ফেলেন। আসামি তারেক (পরে নাম জেনেছেন) তার কাছ থেকে স্টিয়ারিং কেড়ে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে ছাত্রাবাসে যান। এ সময় গাড়িতে বসে ছিলেন দুজন (সাইফুর ও অর্জুন), পেছনে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসেন একজন (শাহ রনি)।

তরুণীর স্বামী বলেন, ছাত্রাবাসের সামনে নিয়ে প্রথমে টাকা দাবি করেন আসামিরা। তারপর তাকে নামিয়ে আটকে রেখে তরুণীকে গাড়িতে ধর্ষণ করা হয়। পরে তরুণীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কক্ষে নিয়ে যান, আবার গাড়িতে নিয়ে আসেন। এভাবে কয়েকবার আনা–নেওয়া করেন বলে জানিয়েছিলেন স্বামী।

ছাড়া পাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী দুজনে ওই রাতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে টিলাগড় মোড়ে যান। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিহিত গুহ চৌধুরীর (বাবলা চৌধুরী) কাছে ঘটনার কথা জানান বলে বলেছিলেন তরুণীর স্বামী। পরে বাবলা চৌধুরী বলেছিলেন, তিনি ঘটনাস্থলে যান। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছাত্রাবাসে দেখেন। তখন পর্যন্ত তরুণীর স্বামীর গাড়িটি সেখানেই ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও ছাত্রাবাসের ফটকে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় ছিল। এরই মধ্যে খবর পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ গিয়ে গাড়ি এবং সাইফুরের কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জবানবন্দিতে সাইফুর ও অর্জুন দুজনেই বলেছেন, বাবলা চৌধুরী তাদের দেখে ফেলার পর গাড়িটি পরিষ্কার (ধর্ষণের আলামত নষ্ট করে) করে পালাতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই সোহেল) ঘটনাস্থলে আসছেন দেখে তারা পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে গত রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে শাহপরান থানার এসআই সোহেল রানা বলেন, তিনি যদি ওই সময় না যেতেন, তাহলে গাড়িটি ধুয়েমুছে আলামত নষ্ট করে পালাতেন আসামিরা। ধর্ষণের আলামত তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংরক্ষিত করেন। পরে কক্ষে সাইফুরের অস্ত্রশস্ত্র দেখতে পান।

করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দখল করা একটি কক্ষের সামনে সদ্য বিবাহিত তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে শাহ রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে তিন দিনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ছয়জনসহ আটজন গ্রেপ্তার হন।

পুলিশ জানায়, গত সোমবার সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার সন্দেহভাজন দুই আসামি আইনুদ্দিন ও মিসবাউর রহমান ওরফে রাজনকে এবং সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া শাহ মো. মাহবুবুর, তারেকুল ও মাহফুজুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। আজ শনিবার আইনুদ্দিন ও মিসবাউরের রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877