শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

বিভক্তিকে হাতিয়ার বানাচ্ছেন ট্রাম্প

বিভক্তিকে হাতিয়ার বানাচ্ছেন ট্রাম্প

অ্যান মারি স্লটার শ্যারন ই. বার্ক: কোভিড-১৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব—এ দুই সমস্যা মোকাবিলায় বিশেষত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা গভীর একটি সংকট তৈরি করছে। দুটি ক্ষেত্রেই প্রত্যেক মানুষকে রক্ষা করার নামে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ও বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা সমাজের বিদ্যমান বৈষম্য আরও প্রকট করে তুলছে। এই দুই বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যখন সর্বস্তরের মানুষের ঐক্য ও সংহতি দরকার, ঠিক তখন নাগরিকদের বিভেদ-বিভক্তি জনতুষ্টিবাদকে শক্তিশালী করে তুলছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প যে ‘বিপর্যয়কর কায়দায়’ মহামারি মোকাবিলা করেছেন, তা দেশটিতে বিদ্যমান শ্রেণিগত, বর্ণগত, জাতিগত, এমনকি বয়সগত বিভেদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে মাসের পর মাস ৬০ শতাংশ অর্থনীতি বন্ধ হয়েছিল এবং পরে এক অঙ্গরাজ্যের পর অন্য অঙ্গরাজ্যে সবকিছু খুলে দেওয়া হয়। এই অবস্থার মধ্যে যেসব লোক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন এবং স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা কাজ পাননি, তাঁদের চক্ষুশূল হয়েছেন।

আগামী দুই দশকে দেশটিতে সংখ্যাগত সাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে। সেই দিকটির কথা মাথায় রেখে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাম্যের চেতনা গড়ে তোলা দরকার। বিভেদ–বিভক্তির মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের মতো জনতুষ্টিবাদী নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারবেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে সংহতি ও সহিষ্ণুতাই সমাধান

যে ৪০ শতাংশ অর্থনীতি চালু ছিল, সেখানেও বৈষম্য দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে কয়েক লাখ ‘প্রয়োজনীয় কর্মী’কে কাজে যুক্ত রাখা হয়েছে, যাঁদের বেশির ভাগই কম মজুরি পাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গ আমেরিকান। কোভিড-১৯ মহামারিতে যতসংখ্যক শ্বেতাঙ্গ আক্রান্ত হয়েছেন, তার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছেন এই অশ্বেতাঙ্গ আমেরিকান। এই মহামারি তরুণ ও প্রবীণ আমেরিকানদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব বাধিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বাইরে সামাজিক, শিক্ষাগত ও আর্থিক দিক থেকে তরুণ আমেরিকানরা বয়স্ক আমেরিকানদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩৪ বছরের নিচের বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার দুই অঙ্কের ঘরে চলে এসেছে। কিন্তু এসব ঘটার কথা ছিল না।

এর জন্য ট্রাম্পের দুর্বল মোকাবিলাব্যবস্থা দায়ী। দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি ও ঘানার মতো দেশে সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। মহামারি মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে জনতুষ্টিবাদী সরকার শাসিত দেশগুলোতে। ট্রাম্পের মতো পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ও ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট কোভিড মোকাবিলায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করার বদলে প্রথম থেকেই সমস্যার জন্য অন্যদের দোষারোপ করে এসেছেন। এই মহামারিকেও তাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন এবং সে উদ্দেশ্যেই জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। এসব নেতা যে জনগোষ্ঠীকে নিজেদের সমর্থক বলে মনে করেছেন, তাদের জন্য তাঁরা অপেক্ষাকৃত বেশি সুবিধা দিয়েছেন। এতে জনগণের মধ্যে পক্ষ ও প্রতিপক্ষের সৃষ্টি হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা দেখা গেছে। জলবায়ু মোকাবিলার তহবিল বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা দেওয়ায় সব শ্রেণির মানুষ এই উদ্যোগে একাত্ম হতে পারেনি। যাঁরা তহবিলের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরা জলবায়ু মোকাবিলায় শামিল হতে চান না। অর্থাৎ মহামারি বা মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় সব মানুষের সংহতি অপরিহার্য হলেও তা বিভক্তির কারণে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

আমেরিকায় বর্তমানে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গরা এখন আর সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। ২০২৭ সাল নাগাদ ৩০ বছরের কম বয়সীরাও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে সমগ্র আমেরিকায় সব শ্রেণির শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে। অর্থাৎ আগামী দুই দশকে দেশটিতে সংখ্যাগত সাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে। সেই দিকটির কথা মাথায় রেখে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাম্যের চেতনা গড়ে তোলা দরকার। বিভেদ–বিভক্তির মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের মতো জনতুষ্টিবাদী নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারবেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে সংহতি ও সহিষ্ণুতাই সমাধান।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

অ্যান মারি স্লটার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক পরিচালক ও প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক।

শ্যারন ই. বার্ক সাবেক সহকারী মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877