শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

ইউরোপে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের কম

ইউরোপে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের কম

স্বদেশ ডেস্ক:

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রফতানি গত বছরের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস এবং জুন-জুলাই পর্যন্ত ব্যাপকভাবে রফতানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে মোট পরিসংখ্যানেও। ২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে রফতানি বেড়েছে মাত্র ১২ কোটি ইউরো বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

২০২৪ সালে সার্বিকভাবে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রফতানিতে মন্দা ভাব দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাড়তি লিড টাইম, গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতি, দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বেশ কয়েকটি কারণে রফতানিতে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুসারে, বিগত ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে প্রায় ১ হাজার ৫০৮ কোটি ইউরোর তৈরি পোশাক রফতানি হয়। চলতি বছরের একই সময়ে সেটি সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১ হাজার ৫২০ কোটি ইউরোতে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১২ কোটি ইউরো বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ।

তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে পোশাক রফতানি বেড়েছে। এ তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অক্টোবরে। গত বছরের একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে প্রায় ১৩০ কোটি ৯২ লাখ ইউরোর পোশাক রফতানি হয়। আর চলতি বছরের অক্টোবরে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ কোটি ১৫ লাখ ইউরোয়। অর্থাৎ প্রায় ৪৪ কোটি ২৩ লাখ ইউরো বা ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ইউরোপের বাজারে পোশাক রফতানি কম হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে প্রায় ৬১ কোটি ৩২ লাখ ইউরো, ফেব্রুয়ারিতে ২৯ কোটি ১০ লাখ ইউরো এবং মার্চে রফতানি কমেছে ১৫ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। তবে এপ্রিল ও মে মাসে রফতানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৪০ কোটি ১৭ লাখ ও ২৭ কোটি ৩৭ লাখ ইউরোতে দাঁড়িয়েছে।

ইউরোপের বাজারে পোশাক রফতানিতে আবারো ছন্দপতন ঘটে চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে। এর মধ্যে জুনে প্রায় ৭ কোটি ইউরো এবং জুলাইয়ে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ ইউরো রফতানি কম হয়েছে। তবে আগস্টে প্রায় ৬ কোটি ৫৫ লাখ ইউরো, সেপ্টেম্বরে প্রায় ১০ কোটি ৫৫ লাখ ইউরো এবং অক্টোবরে রফতানি বৃদ্ধি বেড়েছে প্রায় ৪৪ কোটি ২৩ লাখ ইউরো।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আগামী গ্রীষ্ম মৌসুম পর্যন্ত তৈরি পোশাকের রফতানি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু শীতে হয়তো রফতানি বাড়বে। তবে এখনো পোশাকের দাম নিয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কম মূল্যের কারণে অনেক ক্রয়াদেশই নেয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’

এ ব্যবসায়ী নেতার মতে, গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো না গেলে ক্রয়াদেশ থাকলেও রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া সুদের হার আবারো বাড়ানো হয়েছে। ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না বলেও মনে করেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি।

এদিকে ইউরোপের বাজারে শীর্ষস্থানে থাকা চীনের রফতানি বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। এছাড়া বাংলাদেশের শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ, ভারতের শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং পাকিস্তানের বেড়েছে ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ। তবে তুরস্কের রফতানি ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ কমেছে।

অন্যদিকে, বৈশ্বিকভাবে ইউরোপের দেশগুলোয় গত বছরের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে তৈরি পোশাকের আমদানি কমেছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। সে হিসেবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সামান্য হলেও প্রতিযোগিতার বাজারে এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877