সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
১৪ বছর পর ‘ভুলভুলাইয়া’র ছবিতে অক্ষয় কুমার ‘কিশোর গ্যাং নির্মূলে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়েছে র‌্যাব’ উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হারানোর পর থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ বিরোধী দল নিধনে এখনো বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে : মির্জা ফখরুল রাজশাহীর দুই জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার বন্ধ কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ, ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিছিন্ন তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী গ্রেফতারের আতঙ্কে নেতানিয়াহু, প্রতিরোধের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রও পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা
স্কুলে যেতে ও ফিরতে ৪৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন যে শিক্ষিকা

স্কুলে যেতে ও ফিরতে ৪৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন যে শিক্ষিকা

স্বদেশ ডেস্ক:

ভুটান সীমান্ত ঘেষা পশ্চিমবঙ্গের টোটোপাড়া গ্রাম। এ গ্রামের ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে ২০১৮ সালে যোগ দেন মিশা ঘোষাল। এ শিক্ষককে স্কুলে যেতে ও বাড়িতে ফিরতে প্রতিদিন ৪৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আর এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ভারতের জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, টোটোপাড়া গ্রামটি আদিম, অতি ক্ষুদ্র উপজাতি টোটোদের বাসভূমি। গ্রামটির উত্তরে ভুটান সীমান্ত, দক্ষিণে একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য বিখ্যাত জলদাপাড়া অভয়ারণ্য, অন্যদিকে তোর্ষা নদী। টোটোদের বেশির ভাগই দুরারোগ্য থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন, তাই এদের গড় আয়ু ৩৫ থেকে ৪০ বছর। ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে মাত্র ৩২১ জন টোটো ছিলেন। এখন তাদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার পরে তারা প্রায় দু’হাজারে দাঁড়িয়েছে।

টোটোপাড়ার স্কুলের সম্পাদক ভাগীরথ টোটো মিশা ঘোষালকে হাতজোড় করে বলেছিলেন, ‘এখানে এসে কেউই বেশিদিন থাকতে চান না, তাই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও ঠিকমতো হয় না। আপনি যেন ছেড়ে চলে যাবেন না।’

এরপর থেকে মিশা ঘোষাল ওই স্কুলে রয়ে গেছেন। আর এর ফলেই তিনি পৌঁছে গেছেন ভারতের ভারতের রাষ্ট্রপতির সামনে। গতকাল শনিবার মিশা ঘোষালকে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম ণাথ কোবিন্দ সম্মানিত করেছেন জাতীয় শিক্ষক হিসেবে।

প্রতিবছর ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, জনপ্রিয় শিক্ষক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় শিক্ষকদের সম্মাননা দেওয়া হয়। এ বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে দুজনসহ মোট ৪৭ জন এ সম্মান পেয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারির জেরে এ বছর জাতীয় শিক্ষক সম্মাননা ভার্চুয়ালি দেওয়া হয়েছে।

সম্মাননা পেয়ে শনিবার রাতে মিশা ঘোষাল বলেন, ‘ওই যে সম্পাদক মশায় হাতজোড় করে বলেছিলেন, যে ছেড়ে চলে যাবেন না যেন, তারপর এখানেই থেকে গেলাম। গত ১২ বছর পরিবার থেকে দূরে থেকে অসম্ভব কষ্ট করে যাতায়াত করে যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছি টোটো ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনাটা ভালো লাগাতে। নানা রকমভাবে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছি। হয়তো তারই স্বীকৃতি পেলাম আজ। ভার্চুয়ালি হলেও মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে নমস্কার করছেন, আমি প্রতি-নমস্কার করছি, কী যে অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না।’

মিশা ঘোষালের স্বামী ও ছেলে থাকেন শিলিগুড়ি শহরে। তিনি বহুদূরের মাদারিহাটে থাকতেন একা। বাড়ি থেকে স্কুলে পৌঁছাতে তাকে পেরতে হয় তিনটি নদী, আরও অনেক ছোট বড় ঝোড়া আর ঘন জঙ্গল। বছর খানেক আগে টোটোপাড়ায় যাওয়ার রাস্তাতেই একটা বাড়ি করেছেন মিশা ঘোষাল।

তিনি বলেন, ‘মাদারিহাট থেকে স্কুলে আসতে ২২ কিলোমিটার পথ পেরতে হতো। মাঝে নদী, নালা, জঙ্গল কী না আছে। একটা নদী ভীষণ খরস্রোতা। জল কমার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয়। একবার তো নদী পেরতে গিয়ে প্রায় ভেসে যাচ্ছিলাম। একটি ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে না ধরে রাখলে ভেসেই যেতাম। কখনো আবার ব্যাগ, চটি ভেসে গেছে। কিছুদিন আগে বড় একটা দুর্ঘটনাতেও পড়েছিলাম। গাড়িতে নদীর শুকনো খাত পেরতে গিয়ে গাড়িই উল্টে গেল। ৯টা সেলাই পড়ল।

ভারতের জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পাওয়া এ শিক্ষিকা বলেন, ‘এত কিছুর পরেও ওসব আর কষ্ট বলে মনে হয় না। আবার আমি যে চেষ্টা করছি ওদের শিক্ষার মানটা বাড়াতে, সেটা বুঝে ছাত্রছাত্রীরাও আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে। তবে ছাত্রীদের সঙ্গে একটু বেশিই খাতির আমার।’

যে বছর মিশা ঘোষাল ওই স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সে বছর একজন মাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে পেরেছিল। আর এ বছর তিনি জাতীয় শিক্ষকের সম্মান পাওয়ার বছর পাশের হার হয়েছে ৮০%। ২০-২১ জনের মধ্যে ১৭ জন মাধ্যমিক পাশ করেছে এ বছর।

মিশা ঘোষাল বলেন, ‘ওরা তো এমনিতেই পড়াশোনায় কিছুটা পিছিয়ে, তাই আমি চেষ্টা করি ওদের প্রথাগত পড়াশোনা ছাড়াও নানা ধরনের পদ্ধতির মাধ্যমে ওদের বিকাশ ঘটাতে। কেউ হয়তো অঙ্ক বা বিজ্ঞানে কাঁচা, তাদের অন্যভাবে পড়াশোনার দিকে আকৃষ্ট করতে থাকি, না হলে পিছিয়ে পড়তে পড়তে হয়তো পড়াশোনাটাই ছেড়ে দেবে। এখন হয়তো পাশ করছে অনেকে, কিন্তু আমার লক্ষ্য শিক্ষার মান উন্নত করা। এ বছর থেকেই উচ্চমাধ্যমিক বিভাগও চালু করা হলো।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877