স্বদেশ ডেস্ক:
রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী টাইরিস হাসপিলের সম্পৃক্ততার ‘পর্যাপ্ত আলামত’ পাওয়া গেছে। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখে এসব আলামত শনাক্ত করা হয়েছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে ম্যানহাটনের ক্রিমিনাল কোর্টে হাসপিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময় প্রসিকিউটররা এসব কথা বলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগ গঠনের সময় টাইরিস হাসপিলকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে যেন জামিনের সুযোগ না দেওয়া হয় সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ভার্চুয়াল শুনানির পর বিচারক জনাথন সভেটকে এ নির্দেশ দেন।
এর আগে ম্যানহাটনের সহকারী ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি লিন্ডা ফোর্ড গ্রেপ্তারকৃত টাইরিস হাসপিলকে ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থাপন করে অভিযোগ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, অভিযুক্ত হাসপিল হোম ডিপোট নামের স্টোর থেকে যে ইলেক্ট্রিক করাত ও অন্যান্য ক্লিনিং সরঞ্জাম কিনেছিল সেগুলো নিহত ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ফাহিমের অ্যাপার্টমেন্টে সিসি ক্যামেরার ভিডিওচিত্র অনুযায়ী সন্দেহভাজন খুনির পরনে যেসব পোশাক ছিল সেগুলো টাইরিস হাসপিলের ব্রুকলিন উডরাফ এভিনিউর বাসায় পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া এনওয়াইপিডির তদন্তকারীরা প্রযুক্তির সাহায্যে নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছেন যে, টাইরিস হাসপিলই পরিকল্পিতভাবে ফাহিম সালেহকে হত্যা করেছে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে এবং পরের ভিডিও সার্ভিলেন্স থেকে অন্তত দুজন সাক্ষী হাসপিলকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। সহকারী ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আদালতকে আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত হাসপিল নিহত ফাহিমের অন্তত ৯০ হাজার ডলার চুরি করে। কিন্তু ফাহিম এ ব্যাপারে পুলিশে রিপোর্ট না করে তাকে কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।
গত সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুর প্রায় পৌনে ২টার দিকে লিফটে ফাহিমের পিছু নেয় মাস্ক পরিহিত হাসপিল। লিফটটি ফাহিমের ফ্ল্যাটে পৌঁছানোর পরপরই তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে তার কাঁধ ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর মরদেহ অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে রেখে সেখান থেকে চলে যায় হাসপিল। এরপর হোম ডিপো থেকে করাত ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনে পরদিন আবারও ওই অ্যাপার্টমেন্টে যায় সে।
নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাহিমের মরদেহ টুকরা করা শেষে সেগুলো ব্যাগে ভরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল হাসপিলের। তবে তার আগেই ফাহিমের বোন এসে কলিংবেল চাপতে থাকলে ভয়ে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যায় হাসপিল।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনা সম্পর্কে অবগত ৩ জন কর্মকর্তা তাদের জানিয়েছেন, ফাহিমের কাছ থেকে আগে ৯০ হাজার ডলার চুরি করেছিল হাসপিল। ফাহিম তখন তাকে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত করেছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। বরং হাসপিল যেন কিস্তিতে টাকাটা ফেরত দিতে পারে, তার পথ বাতলে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গোয়েন্দারা ফাহিমের ফোনে পাওয়া একটা টেক্সট মেসেজে এই টাকা চুরির ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর হাসপিলের ওপর নজরদারি শুরু করে। শুনানি শেষে বিচারক জামিনের সুবিধা ছাড়াই হাসপিলকে আটক রাখার নির্দেশ দেন। তাকে আগামী ১৭ আগস্ট আবার আদালতে হাজির করার জন্য বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে পড়াশোনা করতেন ফাহিম। নাইজেরিয়া আর কলম্বিয়াতে তার দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানি রয়েছে। পেশায় ওয়েবসাইট ডেভেলপার ফাহিম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন। ফাহিমকে হত্যার ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যেই তিনি পশ্চিমা মিডিয়ায় টেক জায়ান্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই নিজের প্রযুক্তি প্রতিভার প্রমাণ দেন এ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। ৩৩ বছর বয়সী ফাহিম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হরিসপুরের আইবিএমের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালেহ আহমেদের ছেলে।